‘মোদি হটানো’র লক্ষ্য নিয়ে ১৯ জানুয়ারি ভারতের কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মহাসমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। এতে যোগ দেবেন ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিরোধী দলের নেতারা। গত বছরের ২১ জুলাই কলকাতায় শহীদ দিবসে তৃণমূল আয়োজিত এক মহাসমাবেশ থেকে ১৯ জানুয়ারি নরেন্দ্র মোদিকে হটানোর মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের দাবি, ১৯৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতা থেকে বামফ্রন্টকে হটানোর লক্ষ্যে ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজিয়েছিলেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ১৯ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড সমাবেশ থেকে কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজানো হবে।
মমতা বলেছেন, বিজেপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে ২৮২টি আসন পেলেও এ বছর ১০০ আসনও পাবে না। তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাটে বিজেপির আসন হবে শূন্য। উত্তর প্রদেশে অখিলেশ যাদব, মায়াবতীরা এক হওয়ায় বিজেপির ধরে রাখা ৭২টি আসনের মধ্যে এক–চতুর্থাংশ আসন পাবে না তারা। বিহারে এবার আসন কেড়ে নেবে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের দল। ওডিশায় আসন কাড়বে বিজু জনতা দলের নেতা নবীন পট্টনায়ক। আর পাঞ্জাবে কংগ্রেসের অমরেন্দ্র সিং।
ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের সমাবেশকে সফল করার জন্য মমতা কোমর বেঁধে নেমেছেন। এক মঞ্চে ওঠাচ্ছেন বিজেপিবিরোধী বিভিন্ন দল আর নেতাদের।
তৃণমূল জানিয়েছে, ওই সমাবেশে বিজেপিবিরোধী ২০ নেতাসহ আরও বহু নেতা যোগ দেবেন। তাঁদের মধ্যে থাকবেন কর্ণাটকের জনতা দল (সেক্যুলার) নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী, এই দলেরই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, জম্মু কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ফারুক আবদুল্লাহ, উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী দলের নেতা অখিলেশ যাদব, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও তেলেগু দেশম দলের নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের অন্যতম নেতা ও লালুপুত্র তেজস্বী যাদব, তামিলনাড়ুর ডিএমকে দলের নেতা এম কে স্টালিন, বিহারের লোকতান্ত্রিক জনতা দলের নেতা শারদ যাদব, ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপির বিদ্রোহী নেতা যশোবন্ত সিনহা ও শত্রুঘ্নœসিনহাসহ বিজেপিবিরোধী দলের নেতারা। সব মিলিয়ে ওই দিন বিজেপিবিরোধী ২২টি দলের নেতাদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমন্ত্রণ জানালেও এখন পর্যন্ত কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সমাবেশে কারও যোগ দেওয়ার কথা জানানো হয়নি। এদিকে বাম দল ঘোষণা দিয়েছে, তারা কেউ থাকবেন না মহাসমাবেশে।
১৯ জানুয়ারির সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গজুড়ে মহাসমাবেশের বড় বড় তোরণ, পোস্টার, ব্যানার লাগানো হচ্ছে।
জানা গেছে, ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তৈরি করা হচ্ছে পাঁচটি মঞ্চ। একটিতে বসবেন মমতাসহ বিভিন্ন রাজ্যের নেতা ও মন্ত্রীরা। আরেকটিতে বসবেন তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কেরা । তৃতীয় মঞ্চে থাকবেন তৃণমূলের বিভিন্ন জেলার নেতারা। আর দুটি মঞ্চে থাকবেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা। ৭০০টি লোহার রড দিয়ে গড়া হচ্ছে এই মঞ্চ। এক হাজার মাইক্রোফোন থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার, এলইডি টিভি রাখা হচ্ছে সমাবেশস্থলে।
এ ছাড়া বিভিন্ন রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতা–কর্মীদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য থাকছে ১০০টি ক্যাম্প। তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, উত্তীর্ণ মিলনায়তন, সল্টলেক পৌরসভার খেলার মাঠ ও বিভিন্ন ধর্মশালায়। দুপুর ১২টায় সমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশকে সফল করার জন্য থাকবে তৃণমূলের পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। তৃণমূল দাবি করেছে, সমাবেশে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মানুষ যোগ দেবে।
তৃণমূল নেতারা বলছেন, ব্রিগেড সমাবেশের দিন তৃণমূল কর্মীরা মমতাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়ে স্লোগান তুলবেন।
সূত্র : নিউজ ২৪