মানছুর আলম, কুবিঃ বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হলো অনেকটা প্রতিবিম্বের ন্যায়। যেখানে তাকালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পার করলেও এখনো নামমাত্র ওয়েবসাইট দিয়েই পার করছে দৈনন্দিন কার্যক্রম।
ওয়েবসাইট নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা ও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক ওয়েবসাইট নির্মাণের জন্য কমিটি গঠন করা হলেও মাঝপথে উপাচার্যের মৌখিক নির্দেশে সে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওয়েবসাইট সংক্রান্ত সমস্যার আধও কোনো সমাধান হয়নি। যার ফল স্বরুপ প্রতিবছরের ন্যায় এবছরেও ভর্তিচ্ছুদের আবেদনের সময় ওয়েবসাইট হ্যাং হয়ে যাওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে না পাওয়াসহ নানা জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছে।
ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায় বিজ্ঞান অনুষদ ও ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ ছাড়া অধিকাংশ বিভাগেই স্নাতকে কোন কোর্স গুলো পড়ানো হয় তার কোনো তথ্য নেই। শুধুমাত্র ভিশন ও মিশন লিখেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বিভাগগুলোর কার্যক্রম। অন্যদিকে সান্ধ্যকালীন কোর্স করানো অধিকাংশ বিভাগের নোটিশ বোর্ডগুলোতে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নোটিশ না থাকলেও উইকেন্ড/ইভেনিং এম.এ/এমবিএ’র নোটিশ রয়েছে।
সিলেবাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, গণিত, লোকপ্রশাসন, মার্কেটিং ও সিএসই বিভাগে সিলেবাস দেওয়া থাকলেও শুধুমাত্র লোকপ্রশাসন ব্যতিত বাকি বিভাগ গুলোতে আপডেট নেই। এছাড়া প্রতিটা বিভাগের পোর্টফোলিও তৈরি করা থাকলেও গণিত, লোকপ্রশাসন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতে বিভাগ, ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও প্রকৌশল অনুষদের দুই বিভাগ ছাড়া আর কোন বিভাগের পোর্টফোলিওতে বিভাগের ছবিও দেওয়া নেই। সারাবছর বিভিন্ন দিবস, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও আপডেট করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্টফোলিও।
এছাড়াও ওয়েবসাইটটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পরিচয় বিস্তারিত দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র নাম, ছবি, ই-মেইল, ফোন নম্বরে পরিচয় সীমাবদ্ধ। একজন শিক্ষক কোন বিষয়ে গবেষণা করছে বা করেছেন সেসব বিষয় নিয়ে কিছুই লেখা নেই ওয়েবসাইটে। ফলে, শিক্ষার্থীরা কোনো গবেষণার কাজে কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে সঠিক দিক-নির্দেশনা পেতে পারেন তা নিয়ে সংশয়ে থাকেন।
ওয়েবসাইটে প্রতিটি বিভাগের জন্য রিসার্চ গ্রুপ নামে আলাদা একটি পেজ রয়েছে যেখানে গবেষণা সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তথ্য থাকার কথা। কিন্তু লোক প্রশাসন ও আইসিটি বিভাগ ছাড়া বাকি বিভাগ গুলোর পেইজটি সম্পুর্ণ ফাঁকা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাবলিকেশন এড করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক নয়াশতাব্দীকে বলেন, ”প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেই কম বেশি গবেষণা হয়। তাছাড়া প্রত্যেক শিক্ষককে পদোন্নতির জন্য আবেদন করার আগে কিছু নির্দিষ্ট পাবলিকেশন দেখাতে হয়। যা বিশ্বের বিভিন্ন নামীদামী প্রতিষ্ঠানে পাবলিশড হয়ে থাকে। এই পাবলিকেশন গুলো বিভাগ ওয়াইজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল সাইট গুলোতে রাখা যেতে পারে। এতেকরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলেই উপক্রিত হবে।”
এছাড়াও ওয়েবসাইট ঘেঁটে আরও দেখা যায় ট্রান্সপোর্ট সেকশন, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, ক্যাফেটেরিয়া, গেস্ট হাউসের জন্য যে লিংক গুলো বরাদ্দ রয়েছে তার অধিকাংশই ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের অপর্যাপ্ত তথ্যের পাশাপাশি রয়েছে কিছু ভুল তথ্যও যা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারভুক্ত সংগঠনগুলোর জন্য বিভ্রান্তিকর। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ টি রেজিস্ট্রারভুক্ত সংগঠন থাকলেও ওয়েবসাইটে মাত্র ৫ সংগঠনের নাম উল্লেখ রয়েছে। যারমধ্যে ১ টি অস্তিত্বহীন সংগঠনও রয়েছে।
এছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলা ১৬৫৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মেগাপ্রজেক্টের ব্যাপারেও কোনো আপডেট তথ্য নেই। যা অনেকটা বিশ্ববিদ্যালয়টির অগ্রযাত্রাকে অন্ধকারে ঢেকে রাখার মতো।
কুবির সনাতনী ওয়েবসাইটটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও নীরব ভূমিকা পালন করেছে। যার ফল স্বরুপ বিগত ১৫ বছরে মাত্র ৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পেয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
ওয়েবসাইটে তথ্যের অপর্যাপ্ততা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে সিনিয়র প্রোগ্রামার মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ওয়েবসাইট উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিভাগ গুলোর অসম্পূর্ণ তথ্যের জন্য বিভাগের দায়িত্বরত ব্যক্তিবর্গরা দায়ী কেননা তারা আমাদের ইনফরমেশন দিলে আমরা অবশ্যই সেটা সংযুক্ত করে দিবো।
কালচার এন্ড স্পোর্টস অংশে তথ্য বিভ্রাটের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নতুন অনুমোদন পাওয়া সংগঠন গুলোর ব্যাপারে আমাদের জানা নেই। দায়িত্বরতরা আমাদের ইনফরমেশন দিলে আমরা অবশ্যই কারেকশন করে নিবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ওয়েবসাইট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিগ্রই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় একটি নতুন ওয়েবসাইট পেতে যাচ্ছে। আমাদের আগের কমিটির কাজ এখনো চলমান আছে। আমি আজকে বসে কমিটির দায়িত্বরতদের নির্দেশনা দিয়েছি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি আধুনিক ওয়েবসাইট নির্মাণ করা হয়।