ওজন কমাতে ও সুস্থ থাকতে অনেকেই ভাত খাওয়া ছেড়ে দেন। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, নিয়ন্ত্রিত
মাত্রায় কালো চালের ভাতের উপকারিতা প্রচুর।
‘অ্যান্টিঅক্রিডেন্ট ফ্লাভিনয়েড’ যা ‘অ্যানথোসায়ানিন’ নামে পরিচিত তা এই কালো চালে খুব বেশি পরিমাণে
থাকাতেই চালের রঙ কালো হয়েছে। আর কালো চালে এ উপাদানটি থাকার কারণেই ক্যানসার, হৃদরোগ,
ডায়াবেটিস, স্নায়ূরোগ এমনকি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ধমনীতে রক্ত চলাচল যে সব কারণে বাধাগ্রস্ত হয়, কালো চালের
উপাদান তা হতে দেয় না। ফলে উচ্চ রক্তচাপ হয় না। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এই চালে আয়রণ
বেশি কিন্তু শর্করা কম। কালো চালে ক্যালোরির পরিমাণ ১৭০, ফ্যাট ১.৫ গ্রাম (৩%), কার্বোহাইড্রেট ১১%,
আঁশ ৫%, ভিটামিন এ ২%, আয়রণ ৬%।
কালো চাল স্ট্রেসের মাত্রা কমায়। এটি লিভার ও হার্টকে সুস্থ রাখে। কালো চালে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন
যে কোনো ফ্রি রেডিক্যালের বৃদ্ধি রুখে শরীরকে সুস্থ রাখে। এই চাল গ্লুটেনমুক্ত হওয়ায়
বাড়তি মেদ জমার ভয়ও থাকে না।
কালো চালের ইতিহাস অনেক পুরনো। চীনে চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতকে মিং যুগে কালো
চালের চাষ হতো। কিন্তু রাজা ও রাজ পরিবারের সদস্যরা ছাড়া আর কারো সেই কালো চালের ভাত
মুখে তোলার অধিকার ছিল না। প্রজাদের জন্য এই চাল ছিল নিষিদ্ধ। সেজন্য এ চালকে বলা হত
‘নিষিদ্ধ চাল’ বা ‘ফরবিডেন রাইস’।
পরে জাপান ও মায়ানমারে এই চালের চাষ শুরু হয়। সেখান থেকে এই চাল আসে বাংলাদেশে।
তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় চট্টগ্রামে এই চালের চাষ হত বলে গবেষকরা জেনেছেন। বর্তমানে
পাহাড়ে জুমে এই চালের চাষ করা হয়। ভারতের মণিপুরেও এই চালের চাষ হয়।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের কাছে এই চাল বিলাসী খাদ্য বা দামী চাল হিসেবে পরিচিত। চাকমা ও মারমারা
এই চাল বেশি খায়। তাদের কাছে এই চাল ‘পোড়া বিন্নি’ নামে পরিচিত। থাইল্যান্ডেও
এ চালের চাষ হয়। সে দেশে এই চালকে বলা হয় ‘কাও নাইও ডাহম’। ইংরেজীতে থাইল্যান্ডে এ চালকে
বলা হয় ‘black sweet rice’, ‘black glutinous rice’, ‘Indonesian rice’। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম,
কম্বোডিয়ায় এই চাল প্রাতঃরাশ হিসাবে খাওয়া হয়। তৈরি হয় পুডিংও।
কীভাবে রান্না করবেন কালো চাল?
কালো চালের ভাতের রান্নার জন্য আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগে। তাই এই চাল আগের রাতে ভিজিয়ে
রাখুন। তাহলে রান্না করতে অনেক কম সময় লাগবে। এই চাল দিয়ে পায়েসও রান্না করতে পারেন।
পায়েসের রং হবে বেগুনি। কালো চাল রান্নার সময় চালের দ্বিগুণ পানি দেবেন। মাড় ঝরানো ভাত
খেতে চাইলে পানি আরও বেশি দিতে হবে।