তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় ভাগ্নির জামাতা কর্তৃক জাল দলিলে নামজারী করে যুক্তরাজ্য প্রবাসীর দুই কোটি টাকা মূল্যের ভূমি আত্মসাতের চেষ্টায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওই প্রবাসীর দলিল ও নামজারী যাচাই করে জালিয়াতির বিষয়টি টের পেয়ে আব্দুল মুনিমকে (৫৬) আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন। আব্দুল মুনিম যুক্তরাজ্য প্রবাসী আহমদুর রহমানের স্ত্রী ছালেমা খাতুনের বড়বোনের কন্যার জামাতা।
এ ঘটনায় আব্দুল মুনিম ও তাঁর আরেক সহযোগি নজির হোসেন সুরমানকে অভিযুক্ত করে ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তাকিন বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া শহরের স্টেশন চৌমুহনীতে পূর্ব মনসুর মৌজায় ১১৭৯ নং খতিয়ানের ২০৬৮ নং দাগে মৌলভীবাজারের বাসিন্দা, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আহমদুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী ছালেমা খাতুনের নামে ৬ শতাংশ ভূমি রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য দুই কোটি টাকা। সেই ভূমির তত্ত্বাবধায়ক জয়চন্ডী ইউনিয়নের কামারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মৃত মবশ্বির আলীর ছেলে ও হিসেবে প্রবাসীর ভাগ্নি জামাতা মুনিম প্রতারণা করে জাল দলিল তৈরি করে নিজের নামে নামজারী রেকর্ডভুক্ত করেন।
এদিকে ওই ৬ শতাংশ ভূমি থেকে ৩ শতাংশ ভূমি ক্রয় করেন পৌর শহরের উত্তরবাজারের বাসিন্দা মৃত হাজী মো. আব্দুস ছাত্তারের ছেলে জুবায়ের আহমদ সোহেল। তিনি ভূমিটি নামজারী করার জন্য উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করতে গেলে তখনই তিনি দেখতে পান সেই ভূমিগুলো আব্দুল মুনিমের নামে নামজারি করা হয়েছে। তখন তিনি জাল দলিল ও ভূয়া নামজারীর বিরুদ্ধে উপজেলা ভূমি অফিসে একটি মিসকেইস আবেদন করেন।
পরে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে আব্দুল মুনিমের নামে ৩২৫২/১৯৯০ ও ৫৯২২/২০০২ ইং রেজিস্ট্রি দলিল জেলা রেকর্ডরুম থেকে যাচাই করা হয়। যাচাইয়ে দেখা যায় দলিল দুটি ভিন্ন মৌজা ও ভিন্ন এলাকার। আব্দুল মুনিমের নামীয় দলিলের সাথে রেকর্ডরুমের ভলিউমে লিপিবদ্ধ দলিলের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। তখনই জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা ভূমি অফিসে এক শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল মোল্লা জাল দলিলের বিষয়ে আব্দুল মুনিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি তাঁর অপরাধ স্বীকার করেন। এসময় মুনিম জানান তাঁর এই কাজের সাথে উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের নর্তন গ্রামের বাসিন্দা নজির হোসেন সুরমান জড়িত। তাঁর সহযোগিতায় তিনি জাল দলিল তৈরি করেছেন।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় বলেন, এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বাদী হয়ে দু’জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেছেন। আটক আব্দুল মুনিমকে আদালতের মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে। তাঁর সহযোগী নজির হোসেনকে আটকের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল মোল্লা বলেন, আব্দুল মুনিম প্রতারণা করে একজনের ভূমি তাঁর নামে রেকর্ড করে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে আমার কার্যালয়ে শুনানী করি। শুনানীতে সে তার অপরাধ স্বীকার করেছে। তাকে আটক করে কুলাউড়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত দু’জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।