ডেস্ক রিপোর্ট (মোস্তাফিজুর রহমান) : এবার কোনও রাষ্ট্রনেতা নন, এমনকি কোন মানবাধিকার কিংবা সমাজকর্মী নন। নোবেল শান্তি পুরস্কার পেল একটি সংস্থা। চলতি বছরে বিশ্বে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেল জাতিসংঘের সহযোগী সংগঠন ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’ বা ‘ডব্লিউএফপি’। ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার লড়াইয়ে অনন্য ভূমিকার জন্য সংস্থাটিকে এ পুরস্কার দেওয়া হলো।
গতকাল শুক্রবার বিকালে নরওয়ের রাজধানী ওসলোতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ‘ডব্লিউএফপি’কে নোবেলে ১০১তম শান্তি পুরস্কার দেওয়ার কথা জানানো হয়। এবারের এই নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩১৮টি নামের মনোনয়ন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে ২১১টি নাম ছিল ব্যক্তির ও বাকি ১০৭ টি নাম ছিল কোনও না কোনও সংস্থার। তাদের মধ্যেই ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামকে বেছে নেওয়া হয়। সব প্রতিকুলতা পেরিয়ে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতে দীর্ণ ও যুদ্ধকবলিত এলাকাগুলিতে ক্ষুধা নিরসনে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপই এ বছর জাতিসংঘের সহযোগী সংগঠনটিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
ডব্লিউএফপি মূলত জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা সংক্রান্ত শাখা। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠা হয় এই ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম। এটি ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বিশ্বের বৃহত্তম সংস্থা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নিজস্ব তথ্যমতে, সংস্থাটি প্রতি বছর ৭৫টি দেশে আট কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দান করে। এই সংস্থা গত বছর প্রায় ৯ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে সাহায্য করেছে।
ডব্লিউএফপি-র সদর দফতর রোমে অবস্থিত। দুনিয়াজুড়ে এর ৮০টিরও বেশি শাখা আছে। এগুলোর মাধ্যমে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এমন সব মানুষকে সাহায্য করে যারা নিজেদের জন্য এবং পরিবারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাবার উৎপাদন কিংবা সংগ্রহ করতে অক্ষম।
এবারের শান্তির নোবেল পুরস্কারজয়ীর নাম ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ডব্লিউএফপি মুখপাত্র বলেছেন, ‘এটা একটা গর্বের মুহূর্ত।’ গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলী।
গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ইথিওপিয়ার সংস্কারপন্থী প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। মূলত দুই দশক ধরে প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে চলা যুদ্ধের অবসানের ক্ষেত্রে এবং দেশে আমূল সংস্কারের কারিগর হিসেবে তাকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত সোমবার থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল জয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস আবিষ্কারের জন্য এ বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানী হার্ভে জে আল্টার ও চার্লস এম রাইস এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল হাউটন। কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কে নতুন আবিষ্কারের জন্য গবেষণার জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানী রজার পেনরোস, মার্কিন জ্যোতির্বিদ রেইনহার্ড গেঞ্জেল ও জার্মান পদার্থবিদ আন্দ্রিয়া ঘেজ।
ডিএনএ সম্পাদনায় ক্রিসপার বা ক্যাস-৯ নামের নতুন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ফ্রান্সের ইমানুয়েল কারপেনটির ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেনিফার এ ডোডনা। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন মহিলা কবি লুইস গ্লুক। আগামী সোমবার অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপকের নাম ঘোষণা করা হবে।
অন্যান্যবারের মতো এবার অবশ্য ডিসেম্বর মাসের নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নোবেল ফাউন্ডেশন। তবে চলতি বছরে পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ লক্ষ ক্রোন বাড়ানো হয়েছে।