কলঙ্কিত হত্যাকান্ডের নিয়ামক সমূহঃ
উদারপন্থী প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বেসামরিক জনগণের হাত থেকে অস্ত্র উদ্ধার ও সেনাবাহিনী কম থাকায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি জাতীয় রক্ষীবাহিনী গড়ে তুলেন।
জাতীয় রক্ষীবাহিনী ছিল ১৯৭২ সালে গঠিত একটি মিলিশিয়া বাহিনী যা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি খুব বেশি অনুগত ছিল। অনেকে বলতে শুরু করেন এটি সরকারকে রক্ষার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় । এটি বেসামরিক জনগণের কাছ থেকে অস্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য গঠিত হলেও প্রকৃতপক্ষে মুজিব সরকারের অনুগত হিসেবে কাজ করতে শুরু করলে সরকার বিরোধীরা এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা শুরু করে। তারা বলতে শুরু করে মুজিব সরকারকে উৎখাতের হাত থেকে বাঁচাতে এ বাহিনী গড়ে তুলা হয়েছে।
কিছুদিনের মধ্যে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর সাথে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।জাতীয় রক্ষীবাহিনী সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষও মুজিবুরের হত্যাকাণ্ডের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বামপন্থী শক্তির উত্থান ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডঃ
সিরাজ, কর্ণেল তাহের, হাসানুল হক ইনুরা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গড়ে তুলে।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে উদীয়মান বামপন্থী শক্তি মুজিব হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অনেকটা দায়ী। কারণ, এদের সাথে মুজিব বিরোধী চক্র, দেশী-বিদেশী আন্তর্জাতিক খুনি চক্র, সেনাবাহিনীর বহিস্কৃত অফিসাররা যোগ দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে শুরু করে।
কর্নেল আবু তাহের ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাসদের সশস্ত্র শাখা সর্বহারা টিম গড়ে তুলে, তারা গণবাহিনী সরকারের সমর্থক, আওয়ামী লীগের সদস্য ও পুলিশদের হত্যার মাধ্যমে অভ্যূত্থানে লিপ্ত হয়। অপরদিকে জাসদের আরেক নতা সিরাজ গংরা সারাদেশে সর্বহারা কার্যক্রম ও খুন, লুট, চুরি, ডাকাতি শুরু করলে দেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে ও সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং এটিও মুজিব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পথ প্রশস্ত করে দেয়।
চক্রান্তকারীগণঃ
পরবর্তীতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে দেশীয় পাকিস্তানি অনুগত শিষ্যরা এবং বিপথগামী কুচক্রী বহিষ্কৃত সেনাসদস্যরা পাকাপোক্ত ষড়যন্ত্র করেন জাতির জনক ও তার পরিবার পরিজনদের হত্যার জন্য। সেখানে যারা চক্রান্ত করেছে তারা হলোঃ
কর্নেল (সেই সময়ে মেজর) সৈয়দ ফারুক রহমান, খন্দকার আবদুর রশীদ, শরীফুল হক (ডালিম), মহিউদ্দিন আহমেদ, এ.কে.এম মহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা এবং এস.এইচ.এম.বি নূর চৌধুরী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মেজর ছিলেন। বিদেশি গোয়েন্দাদের থেকে ইঙ্গিত পেয়ে তাঁরা সরকারকে উৎখাত করে নিজেদের সামরিক সরকারের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করে। মুজিবের মন্ত্রিপরিষদের আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণে সম্মত হন। তবে মোশতাক ও সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি চক্রান্তে জড়িত ছিল বলে সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ দাবি করেন।[৯] কথিত আছে, তৎকালীন সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স এবং এয়ার ভাইস মার্শাল আমিনুল ইসলাম খান মুজিব হত্যার চক্রান্ত সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।
প্রদীপ কুমার দেবনাথ,
সহকারী প্রধান শিক্ষক,
ফান্দাউক পন্ডিতরাম উচ্চ বিদ্যালয়,
নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।