প্রকৃতির রোষ বোধহয় একেই বলে। গত ৭০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের কবলে চিন। এখনও পর্যন্ত দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ইয়াংজি নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংজি ও জিয়াংশু প্রদেশে দুই নম্বর সতর্কতা জারি হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে লালফৌজকে নামানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এবারের বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ অধিবাসী। এখন পর্যন্ত বন্যা ও ভূমিধসে প্রায় ১৪০ জন নিহত হয়েছে।
চিনের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, গত জুন মাস থেকে টানা বৃষ্টির ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল জুড়ে বেশ কয়েকটি নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ার ফলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জিয়াংজির পোইয়াং জেলায় সবচেয়ে বড় হ্রদ পোইয়াংয়ের জলস্তর ২২ দশমিক ৫২ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্রদের ইতিহাসে এই প্রথম এতটা জলস্তর বৃদ্ধি পেল। জল আটকাতে টানা ৯ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ দিতে সেনাবাহিনীকে নামানো হয়েছে।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ২১২টি নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হুবেই, জিয়াংজি এবং ঝেঝিয়াং প্রদেশের হাজার হাজার ঘরবাড়ি জলের তলায় চলে গিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে উঁচু বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন লাখ-লাখ মানুষ। ফলে মানুষের চাপে এবং জলের তোড়ে বাঁধগুলোতেও ফাটল দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় হাজার-হাজার মানুষ রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। জিওয়াংজি প্রদেশের শাংগ্রাওয়ের পোয়াং অঞ্চলে সি নদীর পাড়ের বাঁধে পরিবার সহ আশ্রয় নেওয়া উ সেংশনের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আতঙ্কিত কণ্ঠে সেংশন বলেছেন, ‘টানা ঝড়বৃষ্টি, সঙ্গে মুহুর্মুহু বজ্রপাত। মনে হচ্ছিল বোধ হয় প্রকৃতি সব কিছুকে ধ্বংস করে দেবে। গত কয়েকদিন চোখের দু’পাতা এক করতে পারছি না।’ সুত্রঃ এই মুহূর্তে।