সময়ের অভাব ও কাছে জিম না থাকায় অনেকেরই জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার সুযোগ হয় না। কিন্তু প্রয়োজনীয় খাবারসহ ফাস্টফুড, অধিক ফ্যাট এবং ক্যালরি সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার খেয়ে, দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল, কলেজে কিংবা অফিসে বসে থেকে, শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় প্রচুর চর্বি জমতে থাকে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানান ধরণের মারাত্মক রোগের সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাছাড়াও ডায়াবেটিস, অধিক রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আর এসব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত স্বল্প পরিমাণে হলেও ব্যায়াম করতে হবে। জীবনে স্বাভাবিকভাবে চলার জন্য আমাদের শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। এসব কথা চিন্তা করেই আজ বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর ভিত্তি করে সহজ চারটি ব্যায়ামের কথা নিয়ে আলোচনা করা হবে। ১. দৌড়ানো : সুস্থ থাকার জন্য ডাক্তার ও জিমনেশিয়ামের পরামর্শে সবচাইতে বেশি বলা হয়ে থাকে দৌড়ানোর কথা। শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত ক্যালরি এবং চর্বি পোড়ানোর জন্য এটি সবচাইতে সহজ এবং কার্যকরী ব্যায়াম। ২০০২ সালে নিউট্রিশন জার্নালের ‘রিলেশনশিপ বিটউইন ফিজিক্যাল এক্টিভিটি অ্যান্ড ক্যান্সার রিস্ক’ নামের একটি সার্ভেতে বলা হয়েছে, প্রতিদিন অল্প-স্বল্প করে শরীরের ঘাম ঝরানোর কারণে ব্রেস্ট, কোলন, প্রস্টেট, ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি চল্লিশ থেকে সত্তর শতাংশ কমে যায়। শুধু তা-ই নয়, ছত্রিশ বছর ধরে বিশ হাজার নারী এবং পুরুষের উপর পরীক্ষা করে ডেনিশ নামের একজন বিশেষজ্ঞ এবং তার দল জানিয়েছে, প্রত্যেকদিন পরিমাণ মতো দৌড়ানোর কারণে জীবনকাল পাঁচ থেকে ছয় বছরের মতো বৃদ্ধি পায়। ২০০২ সালে ‘হার্ভাড স্কুল অফ পাবলিক হেলথ’ এর আরেক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সপ্তাহে এক ঘণ্টা দৌড়ানোর কারণে হৃদরোগ এবং ব্লাড প্রেশারের পরিমাণ প্রায় বিয়াল্লিশ শতাংশ কমে যায়। এছাড়াও ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির জন্য, হাড় ও মাসলকে শক্তিশালী করার জন্য এবং ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি সাধনের জন্য দৌড়ের ভূমিকা অসাধারণ। ২. দড়ি লাফ : দৌড়ানো বা জিমে যাওয়র জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই। তাহলে খুব সহজে ঘরে কিংবা ছাদের ছোট জায়গাতে দড়ি লাফের মাধ্যমে আপনি মুক্তি পেতে পারেন অতিরিক্ত ক্যালরি এবং চর্বি থেকে। দড়ি লাফকে দৌড়ানোর পরিবর্তে সবচাইতে কার্যকরী ব্যায়াম হিসেবে ধরা হয়। পা, বাহু, বাট, কাঁধসহ পুরো শরীরের হাড় এবং মাসলকে শক্তিশালী করার জন্য এর জুড়ি নেই। প্রথম দিকে প্রতি এক মিনিটে পুরো দশ ক্যালোরির উপরে বার্ন করা যায় এই ওয়ার্কআউটটির মাধ্যমে। কাজটিতে দক্ষ হলে দশ মিনিটে ২০০ ক্যালোরির উপরে বার্ন করতে পারবেন খুব সহজেই। অল্প জায়গায় করা যায় বিধায় দিনের যেকোনো সময় আপনি এই ব্যায়ামটিতে সময় দিতে পারবেন। প্রথম অবস্থায় তিন সেটে পাঁচ, তিন, দুই মিনিট করে দশ মিনিট কন্টিনিউ করে আস্তে আস্তে সেট সংখ্যা এবং সময় বাড়াতে পারেন। ৩. পুশ-আপ : পুশ-আপ হচ্ছে এমন একটি ব্যায়াম যা যেকোনো বয়সে, যেকোনো জায়গায়, যেকোনো পরিস্থিতি করা যায়। ‘শক্তি লাভের ব্যায়াম’ হিসেবে ফিটনেস ডিকশনারিতে যে কয়েকটি ওয়ার্কআউটের উল্লেখ আছে, তার মধ্যে পুশ-আপ অন্যতম। বাইসেপ, ট্রাইসেপ, ফোর আর্মস, গ্রিপ, আপার বডি মাসল, ব্যাকসহ পুরো শরীরের উপরের দিকের মাসলস এবং হাড়কে শক্তিশালী করার জন্য পুশ-আপের ভূমিকা অসাধারণ। বিভিন্ন ধরনের পুশ আপ রয়েছে যেমন: ১) চেস্টের জন্য ওয়াইড-গ্রিপ, ক্লাপ এবং অ্যাটমিক পুশ-আপ। ২) ট্রাইসেপের জন্য হার্ট-শেপড এবং ন্যারো-গ্রিপ পুশ-আপ। ৩) আপার বডির কোর ওয়ার্কআউট হিসেবে সিঙ্গেল-লেগ এবং ফিট-এলিভেটেড পুশ-আপ। ৪) শোল্ডারের জন্য পাইক পুশ-আপ। ৫) পুরো শরীরের কোর ওয়ার্কআউট হিসেবে স্পাইডার ম্যান এবং টি পুশ-আপ। এছাড়াও নানান ধরণের পুশআপ আছে। অনেক ফিটনেস ট্রেইনাররা ক্লায়েন্টের বডি শেপ কেমন হবে, তার উপর নির্ভর করেও পুশ-আপের ডিজাইন করে থাকে। ৪. সিট-আপ : পেটের পেশীকে শক্তিশালী, মজবুত, মেদহীন করা সহ সুগঠিত আকার দেওয়ার জন্য এর ভূমিকা অসাধারণ। পুশআপের মতো শুধু মাত্র ট্র্যাডিশনাল সিটআপ ‘স্ট্যান্ডার্ড কার্নেস’ ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের সিটআপ রয়েছে। যেমন- ওয়েটেড কার্নেস, রিভার্স কার্নেস, রাইজ লেগ কার্নেস, সুইচ বল কার্নেস ইত্যাদি। সিটআপ উপকারী হলেও সঠিকভাবে এই ওয়ার্কআউটি না করলে লোয়ার ব্যাকের ইনজুরিতে পরার সম্ভাবনা থেকে যায়। শুরুতেই যে কথা বলার ছিল : যেকোনো ব্যায়ামের পূর্বে আমাদের প্রত্যেকের উচিত পরিমাণ মতো ওয়ার্ম-আপ করে নেওয়া। এগুলো পুরো শরীরের পেশী গ্রন্থিতে রক্ত পৌঁছে দেয়, দীর্ঘ সময় ব্যায়াম না করার কারণে শরীরে যে জড়তা তৈরি হয়, তা থেকে মুক্তি দেয়। আর ওয়ার্ম-আপের সময় নিয়মিত স্ট্রেচিং আপনার শরীরকে আরও বেশি ফ্লেক্সিবল করে তোলে।