তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার সদর ইউনিয়নের গৃহহীন এক অসহায় বৃদ্ধা হলেন মানোদা মালাকার (৮০)। যার নেই কোনো ঘরবাড়ি। জীর্ণশীর্ণ একটি অস্থায়ী ভাড়াটে কুঁড়েঘরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনোমতে জীবন চলছে তাঁর।
বৃদ্ধা মানোদার পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার রাজু। সম্প্রতি মানোদাকে ভিক্ষাবৃত্তির সময় দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান প্রটোকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজু। খোঁজ নিয়ে সেই গৃহহীন মানোদার পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসলেন আবু জাফর রাজু।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে ওই বৃদ্ধার অস্থায়ী ঘরে গিয়ে তাঁর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার তুলে দেন আবু জাফর রাজু। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ওই বৃদ্ধা মানোদাকে একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন আবু জাফর রাজু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানোদা মালাকার উপজেলার কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত জগেন্দ্র মালাকারের স্ত্রী। ৩০ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। তাঁর তিন ছেলে সন্তান রয়েছে। বড় দুই ছেলে মায়ের কোনো খোঁজ না রাখায় ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেন তিনি। বর্তমানে কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের নাজিরের চক গ্রামে একটি ভাড়াটে ঘরে থাকেন ছোট ছেলে রশু মালাকারের পরিবারের সঙ্গে। বছর খানেক আগে ছোট ছেলে রশু মালাকার মারা যাওয়ায় বিপাকে পড়ে যান মানোদা ও রশু’র স্ত্রী সন্তানরা। মৃত্যুর আগে বৃদ্ধার ছোট ছেলে রশু মালাকার রিকশা চালিয়ে নিজের পরিবার ও তার মায়ের ভরণপোষণ চালাতেন।
মানোদার বড় ছেলে বারিন্দ্র মালাকার পার্শ্ববর্তী জুড়ী উপজেলায় ও ২য় ছেলে নৃপেন্দ্র মালাকার কুলাউড়ার পৌর শহরের শিবির এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। কিন্তু তাঁরা নিজের মা মানোদার কোনো খোঁজ নেন না। অসহায় বৃদ্ধা মানোদাকে ভিক্ষাবৃত্তির সময় দেখতে পান প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজু। খোঁজ নিয়ে সেই অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ালেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দুইটি শাড়ি, তিনটি কম্বল ও নগদ কিছু টাকা উপহার হিসেবে তুলে দেন। এসময় তিনি ওই বৃদ্ধা মহিলাকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
বৃদ্ধা মানোদা মালাকার বলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে কোনোমতে চলি। তার ওপর ‘নিজের একটি ঘর নাই। অন্যের জায়গায় ভাঙা বেড়ার ঘরে থাকি। বৃষ্টি ও শীতের মাঝে খুব কষ্ট হয়।’ এখন একটি ঘর পেলে মরার আগে কিছুদিন শান্তিতে থাকতো পারবো।
বৃদ্ধার পুত্রবধূ ও ছোট ছেলে মৃত রশু’র স্ত্রী জয়ন্তী মালাকার জানান, স্থানীয় এক ব্যক্তির জায়গায় একটি জরাজীর্ণ ঘরে তিন শ টাকা মাসিক ভাড়ায় বসবাস করছি। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার দুই মেয়ে মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার ও এক ছেলে বাজারের একটি চা-দোকানে কাজ করে কোনোমতে বেঁচে থেকে পরিবার চালাচ্ছেন। অসুস্থ শাশুড়ির ভরণপোষণ ও চিকিৎসা খরচ চালানো অনেক কষ্টের। সরকারের পক্ষ থেকে যদি একটি স্থায়ী ঘর পাওয়া যায় তাহলে মাথা গুজার ঠাঁই হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ মো. আবু জাফর রাজু বলেন, ‘সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্থানীয় কুলাউড়ার জনতাবাজার হয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় এক বৃদ্ধা মহিলাকে রাস্তায় বসে থাকতে দেখি। বয়সের ভারে ন্যূব্জ ওই নারী রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাহায্য চাচ্ছেন। বিষয়টি আমার কাছে খুব হৃদয়বিদারক। তাৎক্ষণিক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছু উপহার উনার জন্য নিয়ে যাই। ওই মহিলার পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মুজিববর্ষে একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।