তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা খাসিয়া পুঞ্জির পানজুমে প্রবেশ করে বিট কর্মকর্তা রাজ্জাক আহমেদ পুঞ্জির এক খাসিয়া যুবককে ধরে ঘটনাস্থলে হতে প্রথম দফা মারিপট করা হয়। পরে আবার তার হাত-পা বেঁধে নিয়ে কুরমা বনবিট কার্যালয়ের একটি অন্ধকার কক্ষে আটকিয়ে রেখে অমানসিক নির্যাতন করা হয়। বিকেলে পানপুঞ্জির সহকারী হেডম্যান একটি মুচলেখায় স্বাক্ষর দিয়ে আহত যুবকে ছাড়িয়ে নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
নির্যাতিত যুবক কুরমা পান পুঞ্জির রিয়াং খংলার ছেলে ফরমি সুছিয়াং (২৮)। নির্যাতিত ফরমি সুছিয়াং আবার ফরেষ্ট ভিলেজার। কুরমা বনবিটের বনকর্মীরা এ নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গেল মঙ্গলবার(২০ এপ্রিল) বেলা ১টায় এ ঘটনাটি ঘটে।
নির্যাতিত ফরেষ্ট ভিলেজার আজ বুধবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের জানায়, মঙ্গলবার বেলা ১টায় কমলগঞ্জের রাজকান্দি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে কুরমা বনবিটের নব নিযুক্ত বিট কর্মকর্তা রাজ্জাক আহমেদসহ বনকর্মীরা পান জুমের ভেতর প্রবেশ করেন। করোনাকালে পানজুম এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়না বলে এসময় পুঞ্জির যুবক ফরমি সুছিয়াং তাদের প্রবেশের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে বন প্রহরী জহির মিয়া,বন প্রহরী ফুরকান মিয়া ও নতুন বনবিট কর্মকর্তা রাজ্জাক আহমেদসহ ৪/৫ জন মিলে ফরমি সুছিয়াং কে ধরে নিয়ে লাঠি দিয়ে পেটায়। পরে আবার তার হাত-পা বেধে নিয়ে কুরমা বনবিটের একটি অন্ধকার কক্ষে আটকিয়ে রেখে অমানসিক নির্যাতন করে। এ ঘটনাটি দেখে দুটি শিশু কুরমা খাসিয়া পুঞ্জিতে খবর দিলে নির্যাতিত যুবকটির মামা ডালিম সুছিয়াং ও পুঞ্জির সহকারি মন্ত্রী ছারলেস সু:ঙ এসে মঙ্গলবার বিকালে কুরমা বনবিট থেকে একটি মুচলেখায় স্বাক্ষর দিয়ে আহত ফরমি সুছিয়াংকে ছাড়িয়ে নিয়ে পুঞ্জিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তার অবস্থার অবনতি হলে আজ বুধবার সকালে তাকে নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
কুরমা খাসিয়া পুঞ্জির সহকারী মন্ত্রী ছারলেস সু:ঙ মুঠোফোনে বলেন, তারা বনের জমিতে ফরেষ্ট ভিলেজার হিসেবে বসবাস করে পান চাষ করেন। তাদের যুবক যদি কোন অপরাধ করে থাকে তা হলে তার বিচার করা যেত। এভাবে বনে প্রথম দফা মারপিট করে আবার বনবিটে নিয়ে একটি অন্ধকার কক্ষে হাত-পা বেধে নির্যাতন করা উচিত হয়নি।
ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এভাবে কাউকে মারপিট করা ঠিক হয়নি।
রাজকান্দি রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, যুবকটি বনের গাছ গাছালি ছাটাই করছিল। এজন্য তাকে শাসন করা হয়েছে। তবে মুচলেকা সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেননি।
খাসিয়া মন্ত্রীদের সংগঠন ‘খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি মাগুরছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী জিডিসন প্রধান সুছিয়াং বলেন, এভাবে কাউকে হাত-পা বেধে মারধর করা ঠিক হয়নি। তিনি এ ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা জানান। সাথে সাথে তদন্ত পূর্বক সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন তিনি।