করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে বিশ্বজুড়ে বন্ধ রয়েছে সব ধরণের উপার্জন। প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম অনুযায়ী বন্ধ হয়নি মানুষের ক্ষুধা। তেমনি ক্ষুধার্ত আট সন্তানকে খাবার দিতে না পেরে চুলায় পাথরসহ একটি পাতিল বসিয়েছিলেন এক হতভাগ্য গর্ভধারিণী মা। খাবার প্রস্তুত করার সান্ত্বনা দিয়ে সন্তানদের ঘুম পাড়ানোর কঠিন অভিনয়টি করেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি কেনিয়ার উপকূলীয় মোম্বাসা এলাকায় মর্মস্পর্শী এমন ঘটনা ঘটেছে। খবরটি এক প্রতিবেশী জানার পর গণমাধ্যমকে অবহিত করেছিলেন। ফলে এমন দুর্দশার মর্মস্পর্শী ঘটনা সচিত্র প্রচার হলে অসংখ্য মানুষ ওই হতভাগ্য মায়ের সন্তানদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।
কেনিয়ার আট সন্তানের হতভাগ্য মা পেনিনাহ বাহতী কিতসাও লিখতে পড়তে জানেন না। তাই তিনি স্থানীয় একটি লন্ড্রির দোকানে কাজ করতেন। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় লন্ড্রির কাজও বন্ধ হয়ে পড়েছিল। তাই অসহায় পেনিনাহ আট সন্তানকে খাবার দিতে পারছিলেন না।
কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে সহ্য করতেও পারছিলেন না। সন্তানদের সান্ত্বনা দিয়ে কালক্ষেপণ করে ঘুম পাড়ানোর পরিকল্পনা হিসেবে চুলায় পাথরসহ একটি পাতিল বসিয়েছিলেন। আর চুলার পাশে আট শিশু তখন খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিল। আর এ মর্মস্পর্শী খবরটি এক প্রতিবেশী মূহূর্তেই জেনে যান। তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকে অবহিত করলে ঘটনাটির খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেশের চারদিক থেকে সহায়তার প্রস্তাব আসতে থাকে। ওই মাকে মোবাইল নম্বর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হয়। দুটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তিনি আর্থিক সহায়তা পেতে থাকেন।
পানি-বিদ্যুৎ সংযোগহীন দুই কক্ষের একটি বাসায় থাকা কিতসাও আর্থিক সহায়তাকে ‘অলৌকিক’ মনে করে বলেন, আমি বিশ্বাসই করিনি, কেনিয়ার মানুষ এত ভালোবাসা জানাবে। সারাদেশ থেকে সবাই ফোনের মাধ্যমে সহায়তা পাঠানোর পস্থা জানতে চেয়েছেন।
ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় চুলায় আগুন দেয়ার পর সন্তানরা বলছিল ‘মা মিথ্যা বলছো’। তখন আমার কিছু বলার ছিল না। শিশুদের কান্নার শব্দ শুনে প্রতিবেশী প্রিসকা মোমানিই বাড়িতে এসে ঘটনাটি দেখতে পান।
হতভাগ্য ওই মায়ের স্বামী গত বছর সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। এরপর থেকে আট শিশু নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন তিনি। করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে কেনিয়ার সরকার। কিন্তু ওই মায়ের ঘরে সরকারের কোনো সহায়তা পৌঁছায়নি।
সূত্রঃ বিবিসি।