গতরাতে তুরিনে ফুটবল বিশ্ব দেখেছিল রোনালদো শো। তাই কিনা একটু তেঁতেঁ ছিলেন তারই প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি। তাই নিজের সেরাটা দেখাতে বুধবার রাতই বেছে নিলেন তিনি। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে উঠেছে বার্সেলোনা।
অথচ ম্যাচ শুরুর আগেও শঙ্কা ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আট স্পেন শূন্য হওয়ার। কারণ জুভিদের কাছে অ্যাথলেটিকো হেরে যাওয়ায় স্পেনের প্রতিনিধি হিসেবে বেঁচে ছিল বার্সেলোনা। অবশেষে সব শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে গোল বন্যায় ভাসিয়ে কোয়ার্টারে পা রেখেছে কাতালানরা।
উল্লেখ, এর আগে ২০০৫ এ চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টারে কোনও স্প্যানিশ দল প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনি।
বুধবার রাতে নিজেদের মাঠ ক্যাম্প ন্যূতে লিওঁকে আতিথেয়তা দেয় বার্সেলোনা। এদিন বার্সেলোনার হয়ে দুটি গোল করেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি, একটি করে গোল করেন ফিলিপ কুতিনহো, ওসমানে ডেম্বেলে, জেরার্ড পিকে।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণের পরসা সাজিয়ে বসে বার্সেলোনা। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বার্সেলোনা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মেসির বাঁ পায়ের বাঁকানো শট বাঁক খেয়ে জালে ঢুকতে যাচ্ছিল, ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।
অবশেষে ম্যাচের ১৭তম মিনিটে গোলের দেখা পায় কাতালানরা। মেসির বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সে ঢোকা সুয়ারেজ ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পেনাল্টি থেকে পানেনকা শটে বল জালে পাঠান আর্জেন্টাইন তারকা। চলতি আসরে এটি ছিল বার্সা অধিনায়কের ৭ম গোল।
যার সুবাদে পেনাল্টি পেয়েছে বার্সেলোনা, সেই লুইস সুয়ারেজই বলেছেন, ঘটনাক্রমে মাটিতে পড়ে গেছেন তিনি। পেনাল্টিটা রেফারি না দিলেও পারতেন!
এরপর ম্যাচের ৩১তম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কুতিনহো। ডি বক্সের বাহির থেকে সুয়ারেজের কাছে বল দেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার আর্থার। লিওঁর গোলরক্ষক সামনে এগিয়ে আসলে আলতো ছোঁয়ায় পাশে থাকা কুতিনহোকে পাস দিলে সেখান থেকে গোল করতে ভুল করেননি এ ব্রাজিলিয়ান। এদিকে এ গোল দিয়ে গোলখরা কাটালেন কুতিনহো।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার প্রাণপন চেষ্টা চালায় লিওঁ। যার ফলে ৫৮তম মিনিটে একটি গোলও পায় লিওঁ। বাঁ দিক থেকে বার্সেলোনার ডি-বক্সে উড়ে আসা বল ডিফেন্ডাররা ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে পেয়ে যান তুজা। বুক দিয়ে বল নামিয়ে নিচু শটে ব্যবধান কমান ফরাসি এই মিডফিল্ডার।
ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয়ও দলের তৃতীয় গোল করেন মেসি। বুসকেটসের পাস পেয়ে ডি-বক্সে এক ঝটকায় দুজন ডিফেন্ডারকে ফেলে দিয়ে শট নেন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার। বল ঝাঁপিয়ে পড়া গোলরক্ষকের হাতে লেগে গড়িয়ে গড়িয়ে ভিতরে ঢোকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের চলতি মৌসুমে নিজের ৮ম গোল করে বায়ার্নের রবার্ট লেভানডভস্কির সঙ্গে শীর্ষ গোলদাতা বনে যান মেসি।
ক্লাব ফুটবলের ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতায় মেসির এটি ১০৮তম গোল। আর ঘরের মাঠে ৬১ ম্যাচে হলো ৬২ গোল। এরই সঙ্গে টানা ১১ মৌসুমে ক্লাবের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে কমপক্ষে ৩৫টি করে গোল করার কীর্তি গড়লেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
৮১তম মিনিটে দলের চতুর্থ গোলে বড় অবদান রাখেন মেসি। মাঝমাঠ থেকে বল পায়ে এগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বাঁয়ে পাস দিলে সুয়ারেজ নাগাল না পেলেও পিছন থেকে ছুটে এসে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন পিকে।
পাঁচ মিনিট পর আবারও মেসি জাদু। এবার গোলদাতা কুতিনহোর পরিবর্তে নামা ডেম্বেলে। মাঝমাঠের কাছ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে বাঁ দিকে পাস বাড়ান তিনি। দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে ফাঁকায় বল কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ফরাসি এ তারকা।
এতে করে চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘরের মাঠে টানা ৩০ ম্যাচ অপরাজিত (২৭ জয়, তিন ড্র) থাকলো বার্সেলোনা, যা প্রতিযোগিতাটির রেকর্ড।
সূত্র : আর টি ভি