মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি: কুমিল্লা – সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’। চলতি সপ্তাহে সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুতগতিতে চালালেও, বিকল্প সড়ক উন্মোক্ত এবং সড়কের দু’পাশ বেদখলমুক্ত না করে কাজ করার কারনে দিনভর সীমাহীন জনভোগান্তি চড়মে।
গত বছরের ৯ডিসেম্বর থেকে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করার পর থেকে নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন।গন্তব্যে পৌঁছার অনিশ্চয়তার শংকা নিয়ে রাত- দিন যাত্রী ও মাল পরিবহনগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা সড়কেই কাটাতে হচ্ছে।
সড়কের দেবীদ্বারের চরবাকর থেকে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ এবং বুড়িচং উপজেলার কংশনগর বাজার ও দেবপুর এলাকাপর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দু’পাশে কখনো কখনো ১০/১২ঘন্টা স্থায়ী জ্যামে শত শত পরিবহন আটকে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবী অনুযায়ী ‘কুমিল্লা- সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’র কুমিল্লা ময়নামতি থেকে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার ব্রীজ পর্যন্ত হালকা ও দূর্পাল্লার যাত্রিবাহী যানবাহন চলাচলে গোমতী নদীর ভেরী বাঁধের উপর দিয়ে বিকল্প সড়ক তৈরী ও আভ্যন্তরী যানবাহন বিশেষ করে সিএনজি চালিত অটো রিক্সা, ট্রাক্টর, মাইক্রোবাস,এ্্যাম্ব্যুলেন্স চলাচলে ফাঁড়ি সড়কগুলো বিকল্প হিসেবে সংস্কার না করে এবং সড়কের দু’পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি ও সওজ’র জায়গায় গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা, দৈনিক বাজার, সিএনজি ও অটো রিকসা ষ্ট্যান্ড না সরিয়ে, একপাশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে সড়ক সংস্কার কাজ করার কারনে জনদূর্ভোগ চরম আকারে দেখা দিয়েছে।
গত মঙ্গল ও বুধবার সড়ক ও জনপদ বিভাগের পক্ষ থেকে মাইকিং করে শুক্রবারের মধ্যে সওজের জায়গা থেকে সকল প্রকার অবৈধ স্থাপনা, দৈনিক বাজার, সিএনজি ও রিক্সা ষ্ট্যান্ড সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিলেও অজ্ঞাত কারনে সবই বহাল রয়েছে।
দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল এবং রাজধানীর সাথে যোগাযোগর একমাত্র মাধ্যম এ সড়কের সংস্কার কাজ চলছে অনেকদিন ধরে। যানজটের স্থবিরতায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী বহনকারী এ্যাম্ব্যুল্যান্স, অফিস, স্কুল-কলেজ ও জরুরী কাজে গমনকারী নারী-শিশু-বৃদ্ধ যাত্রী সহ মালবাহী পরিবহনগুলো।
এছাড়াও সড়কটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বিশেষ করে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মানুদের একমাত যোগাযোগ মাধ্যম। চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাখরাবাদ, গোপালনগর, বাঙ্গরা, তিতাস, হবিগঞ্জ প্রভৃতি গ্যাস ফিল্ডের সঙ্গে এবং আখাউড়া বন্দরের সাথে যোগাযোগে সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ক্রমবর্ধমান ভারী যানবাহনের চাপে সড়কটির বিভিন্ন অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি, দেবে যাওয়ার যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী ও বিপদসঙ্কুল হয়ে ওঠেছে।
গতবছরের জুন মাসে ২০১৯-২০২০ইং অর্থবছরে ‘কুমিল্লা- সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’র কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যানট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার অংশ পর্যন্ত ৪০কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। উক্ত দরপত্রে ‘হাসান টেকনো বিল্ডার্স’ ও ‘মেসার্স সোহাগ এন্টার প্রাইজ’ ২৩কোটি টাকার প্রাক্কলন ব্যায় হিসেবে কাজটি পান। দরপত্রে কাজটি সম্পন্ন করায় ২০১৯ সালের ৯ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৮সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯মাস সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়।
নির্ধারিত সময় সীমা’র মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কবে নাগাদ তা শেষ হবে তার সঠিক কোন দিনক্ষণ জানতে পারছেন না ভোক্তভূগীরা। সড়ক নির্মাণকালে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম, পকল্পের কাজের ধরন, প্রাক্কলন ব্যায় কত, কার্যাদেশ কবে পেয়েছে, কবে নাগাদ শেষ হবে ? তার বিস্তারিত তথ্যসম্বলিত একটি সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে রাখার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এমনকি ধূলাবালির কষ্টরোধে পানি ছিটানোরও কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে সেল ফোনে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধীকাদের সাথে যোগাযেগ করার চেষ্টা করেও তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
দেবীদ্বার অংশের নিউমার্কেট বাসষ্ট্যান্ড এবং জেলা পরিষদ’র ডাকবাংলোর সামনের দু’টি বৈদ্যুতিক খুটি, সড়কের দেবীদ্বার অংশের নিউমার্কেট স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে সাবরেজিষ্টার অফিস পর্যন্ত থানা ও আরপি উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর থাকায় সড়কটি সরু হওয়ায় দু’টি গাড়ি পারাপারের সমস্যা পূর্ব থেকেই, তার উপর জমি অধিগ্রহন ও সওজের জায়গা উদ্ধার না করে ২৪ ফুট সড়ক সংস্কারের ফলে ফুটপাতও বিলিন হয়ে গেছে।
বিশেষ করে ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’র বুড়িচং উপজেলার ‘কংশনগর বাজার’, দেবীদ্বার সদর এলাকার বানিয়াপাড়া মাটিয়া মসজিদ থেকে নিউমার্কেট দৈনিক কাঁচা বাজার, হাসপাতাল গেইট ও থানা গেইট হয়ে জোবেদা খাতুন মহিলা কলেজ’ পর্যন্ত এবং মুরাদনগর উপজেলার ‘কোম্পানীগঞ্জ বাজার’ এলাকায় নিত্যদিনের যানজট রুটিনে পরিনত হয়ে আছে।
এসব এলাকায় সড়ক ও জনপদের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা, দৈনিক বাজার, হকার এবং পৌরসভার ইজারায় সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ষ্ট্যাশন, ব্যটারী চালিত অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস, ট্রাক্টর’র দখলে থাকায় যানজট থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা।
ন্যাশনাল সার্ভে এন্ড ডিজাইন কনসালটেন্ট’র পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব মোরশেদ ভূঁইয়া বলেন, বিকল্প সড়ক তৈরী, সড়কের দু’পাশের জায়গা উদ্ধার এবং সড়কের উপর থেকে বৈদ্যুতিক খুটিগুলো না সরিয়ে সড়ক সংস্কারের কাজ ধরা ঠিক হয়নি।
এব্যপারে দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান ক্ষোভের সাথে বলেন, যদিও সড়কটি ‘সড়ক ও জনপদ বিভাগ নিয়ন্ত্রন করেন। জনদূর্ভোগের বিষয় বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে সংস্কার কাজটি দ্রুত শেষ করার অনুরোধ জানিয়েছি।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ কুমিল্লা’র নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ বলেন, জনদূর্ভোগ বিবেচনা মাথায় রেখেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বলেছি ৩মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে।