কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে হনুমান জি’র হাত থেকে গদা সরিয়ে কোলে কোরআন শরিফ রেখে গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাওয়া যুবকের নাম ইকবাল হোসেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ ২০শে অক্টোবর বুধবার এই কথা মিডিয়াকে জানান, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। এজন্য অভিযান চলছে বলেও তারা মিডিয়াকে জানিয়েছেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আমরা অকল্পনীয়ভাবে ভিডিওটি পেয়েছি। ভিডিও দেখেই যে পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রেখে এসেছেন তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তকারীকে ধরার জন্য পুলিশ ইতিমধ্যে চেষ্টা করে চলেছে।’
তিনি জানান, শারদীয় দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীর দিন গত বুধবার ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন দেখা যায়।
আর তারই জের ধরে গত ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিনে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার কথা জানিয়ে ৯৯৯ এ কল করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইকরাম হোসেন।
ফোন প্রাপ্তির কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে সিভিল পোশাকে সিএনজি অটোরিকশায় করে উপস্থিত হন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল আজীম। আর ততক্ষণে ওই ঘটনা সরাসরি লাইভ করে ধর্ম অবমাননার নাটক বানিয়ে মিডিয়াতে ভাইরাল করে দেয় স্থানীয় ফয়েজ আহমেদ।
এই ফয়েজ আহমেদ আগে প্রবাসে ছিলেন, সৌদিআরবে থাকতেন আর এখন বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী। লাইভ প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
তিনি বলেন, ওই সময় ওসি ফোনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঘটনা সম্পর্কে জানাতে থাকলে ফয়েজ ওসির পরিচয় লাইভে দেন এবং কোরআন শরীফ অবমাননার কথা বলে প্রতিবাদ জানানোর কথা বলেন। সাথে সাথে এই ভিডিও বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘৯৯৯ এ ফোন করা ইকরাম সারারাত পূজামণ্ডপের আশেপাশে অবস্থান করেছে এবং ইকবালকে পূর্ব নানুয়ার পাড়ে গদা নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।’
এই পূজামণ্ডপটি ছিল কুমিল্লা শহরের নানুয়াদীঘির পাড়ে, যে দীঘির চারপাশে অনেক হিন্দু পরিবারের বসবাস। আর তারা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরি করে সেখানে দূর্গাপূজা উদযাপন করে আসছেন।
পূজার আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম একজন আয়োজক ‘অচিন্ত্য দাশ’ এ বিষয়ে জানিয়েছেন, সপ্তমী শেষে রাত আড়াইটা পর্যন্ত তাদের পূজা মণ্ডপে লোকজন ছিল। এরপর লোকজন চলে গেলে আয়োজকরা অস্থায়ী মঞ্চের মূল পূজামণ্ডপ পর্দা দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন।
মূল মণ্ডপের বাইরে অল্প দূরত্বে রাম-সীতা আর হনুমানজী’র মূর্তি ছিল এবং সেটি উন্মুক্ত ছিল। আর বাইরের যে কেউই এই মূর্তিগুলোর সন্নিকটে যেতে পারত এবং সেখান থেকেই পাওয়া গিয়েছিল কোরআন টি।
তিনি অবশ্য এও বলেছেন যে, বেসরকারি একটি কোম্পানি থেকে ভাড়া করা একজন নিরাপত্তা কর্মী ভোররাত পর্যন্ত পাহারায় ছিলেন সেখানে। কিন্তু সেখানে যখন কোরআন রাখা হয়েছে, সেই নিরাপত্তা কর্মী সেসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
অচিন্ত্য দাশ আরও বলেছেন, খবর পেয়ে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর ওই পুলিশ কর্মকর্তা পূজামণ্ডপ থেকে কোরআন টি সরিয়ে নিন।
আর ফেসবুক লাইভেও পুলিশ কর্মকর্তার কোরআন সরিয়ে নেয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।
লাইভ টি প্রচার হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং অতর্কিত ভাবে হামলা করা হয় এই মণ্ডপে। অস্থায়ী মঞ্চ আর প্রতিমা ভাঙচুর করে নষ্ট করে দেয় সবকিছু।
শুধু এটুকুতেই ঘটনা শেষ হয়নি, এরপর কুমিল্লারই বিভিন্ন পূজামণ্ডপে এবং হিন্দুদের বাড়িঘরে ঝাঁপিয়ে পড়ে হামলা করে এই হায়েনার দল।
কুমিল্লা, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, রংপুরের পীরগঞ্জ ছাড়াও কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় হামলা, ধর্ষণ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।