অলিউর রহমান নয়ন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত কুড়িগ্রামে ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার ৮টি উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের প্রায় সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান সাময়িক বন্ধ রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় চর ও দ্বীপচরগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যতঃ ভেঙে পড়েছে।
বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ার কারণে অধিকাংশ পরিবারের লোকজন তাদের ঘরের ভিতর উচু মাচাং তৈরি করে আবার কেউ কেউ নৌকায় দিবা রাত কাটাচ্ছেন। এসব পরিবারের রান্নাবান্না করা এখন দুরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে গবাদিপশু নিয়ে অনেক পরিবার চরম বিপাকে পড়েছেন।
জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয়দের তথ্যানুযায়ী, বন্যায় পানিবন্দি রয়েছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার- যাত্রাপুর, মোগলবাসা, ঘোগাদহ, হলোখানা, পাঁচগাছি ইউনিয়ন, নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার, নারায়ণপুর, বামনডাঙ্গা, নুনখাওয়া, বল্লভের খাস, কালীগঞ্জ, বেরুবাড়ি ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বুড়াবুড়ি,সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন, চিলমারী উপজেলার রাণিগঞ্জ,অস্টমির চর,রমনা, নয়ারহাট, চিলমারী সদর ইউনিয়ন, রৌমারী উপজেলার শৌলমারী, যাদুরচর, রৌমারী সদর ইউনিয়ন, রাজিবপুর উপজেলার রাজিবপুর সদর, মোহনগঞ্জ,কোদালকাটি ইউনিয়ন, ফুলবাড়ি উপজেলার ভাঙ্গামোড়,শিমুলবাড়ি এবং ভূরুঙ্গামারী উপজেলার-চর ভূরুঙ্গামারী, শিলখুড়ি, পাইকেরছড়া,বঙ্গ সোনাহাট ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের প্রায় সোয়া লাখ মানুষ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা, যাত্রাপুর, পাঁচগাছী ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বুড়াবুড়ি, বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, থেতরাই ও বজরা ইউনিয়ন, চিলমারী উপজেলার চিলমারী, অষ্টমীরচর, নয়ারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কথা জানান। তাদের মতে এসব এলাকায় আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ কমবেশি বন্যা কবলিত হয়ে পানিবন্দি রয়েছে।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর, রলাকাটা, খেয়ার আলগা, বড়ুয়া ও মাঝিয়ালির চরের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। উজান থেকে আসা ঢলের পানি ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় তাদের এলাকার নিম্নাঞ্চলের অনেক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বর্তমানে ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার, দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার সামান্য নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া, আগামী ২৪ ঘন্টায় উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নদ-নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।