কালের বিবর্তনে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে নওগাঁর আত্রাইয়ের মৃৎশিল্প। প্রয়োজনীয় অর্থ ও উপকরণের অভাবে আত্রাই উপজেলার মৃৎশিল্প ঐতিহ্য হারাতে বসেছে, মৃৎ শিল্পীরা নিজ পেশা ছেড়ে এক প্রকার বাধ্য হচ্ছে অন্য পেশায় আত্ন নিয়োগ করতে। কালের বিবর্তন, প্রতিকুলতা আর প্রযুক্তির এ যুগে মেলামাইন শিল্পের বিকাশে মৃৎলিল্প বিলুপ্ত প্রায়। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আটটি ইউনিয়নে মৃৎশিল্পীদের হাতের তৈরি মাটির হাঁড়িপাতিল ও তৈজসপত্রের প্রশংসা ছিল পুরো রাজশাহী বিভাগ জুড়ে।
স্থানীয় কুমারদের হাতে তৈরি মাটির হাড়িপাতিল, কলস, প্রদীপ, খেলনার তৈজসপত্র আর ঘর ছাওনির টালি ছিল মানুষের নজর কারা। শহর অঞ্চলে মাটির তৈরি তৈজসপত্র ব্যবহার না থাকলেও এক সময় গ্রামঞ্চলে এগুলোর ব্যবহার ও চাহিদ ছিল প্রচুর, গ্রাামে বসবাসকারী বিভিন্ন পরিবারের মেয়েদের পয়সা সংগ্রহের জন্য মাটির তৈরি ব্যাংকের কথা সবার জানা। বিদ্যুৎ চলে গেলে গ্রামের বাড়িতে মাটির প্রদীপের চাহিদাও ছিল। যা বতর্মানে বিরল।
তবে বিভিন্ন রোগ বালাই সারতে এখনও গ্রামের মানুষেরা ব্যবহার করে আসছে পিঠা তৈরীর বাসন, মাটির কলস, হাড়ি ও দই ভরানোর জন্য ছোট ছোট পাতিলসহ ইত্যাদি। আর একারনেই নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মির্জাপুর,পাঁচুপুর, সাহেবগঞ্জ, বিশা, হাটকালুপাড়া, কালিকাপুর পল্লীতে এখনও চাকা ঘুরছে। কিন্তু আগের মত জাঁকজমক আর নেই। দুর্দিনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কষ্ট, হতাশায় যেন সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে পল্লীগুলোতে।
এক সময়ের নন্দিত মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পেছনে নানাবিধ সমস্যা বিরাজ করছে।কুমারদের শ্রমের মজুরি খুবই কম। প্রয়োজননীয় মাটি ও জ্বালানীয় অভাব, সমস্যা বাজারজাত করনেও। সর্বপরি আধুনিক মেলামাইন শিল্পের বিকাশের জন্য মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে
বসেছে।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত উপজেলার মির্জাপুর পালপাড়ায় গিয়ে কথা হয় শ্রী গজেন্দ্র নাথ পাল, শ্রী অমল চন্দ্র পাল, শ্রীমতি সম্পারানী পাল, শ্রীমতি ইতিরানী পাল, ম্রীমতি সুসমা রানী পালের সাথে। তারা জানান, মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাাহিদা কমে গেছে অনেকাংশে, প্রয়োজনীয় মাটির অভাবে, দ্রব্যমূল্য সহ বিভিন্ন কারনে তারা তাদের পুরাতন ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারছে না। তাদের এ পাড়ায় এক সময় তিন’শ পরিবার ছিল এর মধ্যে সব পরিবার ভারতে চলে গেছে। বর্তমানে চল্লিশটি পরিবার রয়েছে। তারাই একমাত্র মৃৎশিল্পের চাহিদা আবারো ফিরে আসবে বলে মনে করছেন।
এবিষয়ে আত্রাই উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ সোহেল রানা বলেন, এই উপজেলার মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে একটি প্রাথমিক জরিপ করা হয়েছে। তাদের পুজিঁর ব্যাপারে অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। আশা করছি এবছরে মৃৎ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিনা সুদে তাদের লোন দেয়া হবে।
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি