মহামারী করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য এখন কোন হাসপাতালে বেড খালি নেই। হাসপাতালে বাড়তি বিছানা বসানোর আর জায়গাও নেই। তাই আমরা হোটেল খুঁজছি, যাতে মৃদু আক্রান্তদের সেখানে রাখতে পারি।‘ মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা সম্পর্কে আঁচ করা যায়। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্ণ-টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আগামী ৭ আগস্ট থেকে ১৮ বছর ও তদু্র্ধ বয়সী সকলকে টিকা প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিনা রেজিস্ট্রেশনেও টিকা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত থেকেও জীবন ও জীবিকা, উভয় বিষয় বিবেচনা করে, গত ৩ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, ১১ আগস্ট থেকে গণপরিবহন, দোকানপাট, অফিসসহ সবকিছু সীমিত পরিসরে চালু করা হবে।
কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ টিকা প্রদানে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে একটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশে এখনো ২ ডোজ টিকা নেয়া মানুষের সংখ্যা এক কোটি হয়নি। এরকম বাস্তবতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গণটিকা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। ৭ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট, ২০২১ পর্যন্ত গণটিকা কর্মসূচি চলবে। সরকারের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে যে, এক সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।
চলমান ভয়াবহ করোনা মহামারী কালে বাকী ১৬ কোটি মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে টিকা‘র পাশাপাশি মাস্ক পরিধান করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। করোনা ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছেন, “শুধু মাস্ক পরলে হবে না, শুধু সামাজিক দূরত্ব রাখলে হবে না, শুধু বারবার হাত ধুলে হবে না। সবকটি বিধিই মানতে হবে”।
সারাবিশ্বে করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিন্তিত। কারণ, বিভিন্ন দেশে সাধারণ মানুষ মাস্ক পরলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ মানছেন না। সংস্থার অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী মারিয়া ফন কারকোভ বলেছেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাধারণ মানুষ আর সামাজিক দূরত্বের বিধি মানছেন না। আমরা মাস্ক পরছি। কিন্তু যথাযথভাবে পরিধান করছি না। এছাড়া করোনাকে ঠেকাতে গেলে সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখতেই হবে। অন্তত ছয় ফুটের দূরত্ব বজায় রাখুন। যদি পারেন তাহলে আরো দূরে থাকুন।“
এখন সবচেয়ে বেশি দরকার হলো, নাকমুখ ঢেকে যথাযথভাবে মাস্ক পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং এ ব্যাপারে একটি গণ জাগরণ তৈরি করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা সংক্রমিত হোক বা না হোক, নাকমুখ ঢেকে যথাযথভাবে মাস্ক পরিধান করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করলে ৯০-৯৫% সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়।
ইতিমধ্যে “মাস্ক পরিধান করুন, নিজে সুস্থ থাকুন, অন্যকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করুন” এই স্লোগানে রাজধানীর কদমতলী থানা আওয়ামীলীগ এর উদ্যোগে সরকারের গণটিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি সকলকে মাস্ক পরিধান করার জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে গত বুধবার (২৮ জুলাই) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৮ নং ওয়ার্ডের বড়ইতলা চত্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এরই মাঝে ঐ কর্মসূচির ৭ম দিন অতিবাহিত হয়েছে।
গত বুধবার (৪ আগস্ট) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় টিকা নিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে সরকারের গণটিকা কার্যক্রম সফল করতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটা ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
গণটিকা কার্যক্রম সফল করতে হলে রাজনৈতিক নেতৃত্বে প্রশাসনসহ সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, মসজিদের ইমাম-খতিবগণ, শিক্ষকমন্ডলীসহ সকলস্তরের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। উপরোল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ এবং সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনসমূহকে সম্পৃক্ত করে, জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে টিকা গ্রহণে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করাও জরুরি। সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ টিকা গ্রহণ না করা পর্যন্ত মানুষকে যথাযথভাবে মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্ব ও উপকারিতা অনুধাবন করানো অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য নিয়মিতভাবে স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবী সংগঠন সমূহের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি এলাকায় বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে হবে এবং তারা সেটি যথাযথভাবে পরিধান করে কিনা তা মনিটরিং করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে টিকা প্রদান কেন্দ্র স্থাপন করে মানুষকে বাসা থেকে এনে বা বাসায় গিয়ে টিকা দিতে হবে।
ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী দেশ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ শপিং মল, রাজপথ, যেকোন স্থানে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে কঠোর কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। বর্তমানে কলকাতায় করোনা সংক্রমণের হার ০% এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশেও, প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করে, একইভাবে কঠোরতার মাধ্যমে মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনী সহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সকল বাহিনীকে যথাযথ দায়িত্ব দিতে হবে। মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে ধর্ম মন্ত্রনালয় ও ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে স্ব স্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির প্রতি কঠোর নির্দেশ জারি করা যেতে পারে। সরকারী-বেসরকারী অফিস, ব্যাংক, কলকারখানা, শপিংমল কাঁচাবাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্ব স্ব কর্তৃপক্ষ যথাযথ দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশনা জারি করা যেতে পারে। এ ছাড়া মহামারী করোনা থেকে মুক্তির আর কোন পথ আছে বলে মনে হয় না।
ডঃ মোঃ আওলাদ হোসেন,
ভেটেরিনারীয়ান, পরিবেশ বিজ্ঞানী, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক কর্মী।