মহামারি করোনার কারণে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে অনলাইনে কেনাকাটা। আর সেই সুযোগে এক শ্রেণির প্রতারক মেতেছে অনলাইন শপিংয়ের নামে প্রতারণায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে মাস্ক, পিপিই, গ্লাভসের চাহিদা বেশি থাকায় এসব পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতারণা বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার।
এখন ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে অনলাইনে কেনাকাটা। মানুষ এখন টুকটাক পণ্য থেকে শুরু করে দামি পণ্য পর্যন্ত কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে অনলাইন থেকে। ফলে দিন দিন অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি মানুষ ঝুকছে বেশী। আজকাল সবধরনের পণ্যই কেনাবেচা হচ্ছে এখানে। তবে অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অসংখ্য অনলাইন শপিং পেজ রয়েছে, যেগুলো নানা রকমের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে থাকে।
এরমধ্যে কিছু পেজ পাওয়া যায় যেগুলো কখনো কখনো এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য ধরনের কিংবা নিম্নমানের পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকে। আবার, কিছু কিছু পেজে অগ্রিম মূল্য পরিশোধের পরেও পণ্য পাওয়া যায় না।
ক্যাশ অন ডেলিভারির ক্ষেত্রে ক্রেতাকে নির্দিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করে ডেলিভারি নেয়ার জন্য বলা হয়। পণ্য ডেলিভারি নেয়ার পর ক্রেতা দেখতে পান তাকে অন্য কোন পণ্য কিংবা নিম্নমানের পণ্য দেয়া হয়েছে। ক্রেতা পণ্য ফেরত দিতে চাইলে বলা হয়, ‘এ প্যাকেজের সাথে রিটার্ন পলিসি না থাকায় রিটার্ন নেয়া সম্ভব নয়।’ কিংবা এ অবস্থায় বিক্রেতাকে ফেসবুকে নক করতে গিয়ে দেখা যায় তাকে আগেই ব্লক করে দেয়া হয়েছে।
প্রতারণা চলছে স্ক্রিল, নিটেলার, বিটকয়েন কেনার ক্ষেত্রেও। এসব সাইটেও আগে পেমেন্ট করে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।
সিআইডি আরো পরামর্শ দিয়েছে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে কেনা-বেচা না করতে। এ ধরনের প্লাটফরমে প্রোডাক্ট কোয়ালিটি বা ক্রেতা/বিক্রেতার আইডেন্টিটি ভেরিফাই করা হয় না। ডিল হয় সরাসরি ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। কোনো ক্রেতা প্রতারিত হলে এ প্লাটফর্মের কিছু করার থাকে না।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার প্রতারক পেজগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতারকরা তাদের পেজগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য বিভিন্ন কাস্টমারদের পজেটিভ রিভিউর স্কিনশট দেয়। তারা বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে ভালো ভালো রিভিউ দিয়ে রাখে তাদের সাইটে।
তাদের পণ্য মূল্য বাজারের একই পণ্যের তুলনায় থাকে অবিশ্বাস্যরকম কম। এসব পেজের বিজ্ঞাপন অন্য কোন পেজ থেকে কপি করা থাকে। যা নেটে সার্স করলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই তারা আগে টাকা দিতে বলে। এসব পেজগুলোর কোনো শোরুম থাকে না বা থাকলেও তা হয় ভুয়া।
এসব পেজগুলোর লাইকের সংখ্যা বেশ কম হয়। তবে বেশি লাইক দেখেই সেটিকে নির্ভরযোগ্য ভাবার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছে সিআইডি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এমন অনেক পেজ আছে যা তৈরি হয়েছিল কোনো নামকরা মডেলের ফ্যান ক্লাব হিসেবে। ফলে দ্রুতই সেটির লাইকের সংখ্যা বেড়ে লাখ ছাড়িয়ে যায়। পরে রাতারাতি ওই পেজের নাম ও ছবি চেঞ্জ করে তা কোনো প্রোডাক্টের মার্কেটপ্লেসে রূপান্তর করা হয়।
এক্ষেত্রে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পরামর্শ: সুপরিচিত বা সুপ্রতিষ্ঠিত অনলাইন শপ ছাড়া অন্য কোন অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। এক্ষেত্রে তাদের কাস্টমার রিভিউগুলো ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিতে পারেন।
প্রতারণার শিকার হলে বিলম্ব না করে পুলিশকে অবগত করুন। সিআইডির সাইবার পুলিশের ১৭৩০-৩৩৬৪৩১ নম্বরে আপনার প্রতারিত হবার বিষয়টি অবগত করার জন্য পরামর্শ রইলো। সুত্রঃ ডিএমপি নিউজ।