মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি: কুমিল্লার মুরাদনগরে নানা অব্যবস্থপনায় বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কোম্পানীগঞ্জ বাজার। দুইশত বছরের ঐতিহ্য লালন করে এ বাজারটি মুরাদনগর উপজেলাসহ আশপাশের পাঁচটি উপজেলা এবং ছয়শতাধিক গ্রামের বাসিন্দাদের চাহিদা পুরণ করে আসছে। কালের বিবর্তনে বাজার কমিটির অব্যবস্থাপনাসহ প্রশাসনের নজরদারি অভাবে বাজারটি ঐতিহ্য হারাচ্ছে। বিশেষ করে এ বাজার থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় করা হলেও প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় এ বাজারে ব্যবসায়ী ক্রেতা-বিক্রেতাগণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এদিকে বাজারের অভ্যন্তরের একটি পুরাতণ খাল বেদখল হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বাজারে হাটুর উপড়ে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এতে দিন দিন জনসাধারণ এ বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। জানা যায়, মোগল আমল থেকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারটি জেলার বিখ্যাত বাজার হিসেবে জনসাধারনের সকল পন্যের চাহিদা পুরণ করে আসছে। জল এবং স্থল পথে সমৃদ্ধ এ বাজারে কয়েক হাজার বড় বড় ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে করছে।
প্রতিদিনই হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতার সমাগমে মুখরিত এ বাজারে ভোগান্তি এখন নিত্য সঙ্গী। এ বাজার থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় করা হলেও বাজার কমিটির অব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনের যথাযথ নজরদারির অভাবে বাজারটিতে দিন দিন ক্রেতা বিক্রেতার সংখ্যা কমছে। বাজারের পুরাতন একটি খাল বেদখল হয়ে যাওয়ায় এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই বাজারটি একেবারে অচল হয়ে পড়ে।
বর্ষা মৌসমের শুরুতেই বাজারে কাটা ময়লা পানির কারনে ক্রেতা বিক্রেতারা বাজার থেকে পন্য ক্রয় করতে পারছেনা। এতে বাজারের ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা সাধারনের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে বাজারের প্রবেশ পথসহ আশপাশে এক শ্রেনীর চাঁদাবাজ চক্র পন্য প্রবেশ এবং বাহিরের সময় যানজট নিরসনের নামে ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজী করে আসছে। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হলেও যানজট নিরসনে কোন কাজ করছেনা বলেও অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। চাঁদাবাজদের দৌড়াত্মের কারণে বাজারে প্রবেশ এবং বাহির হতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ক্ষেপন হচ্ছে। এ ছাড়া দুর দুরান্তের যানবাহন এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপুর্বক চাহিদা অনুসারে চাঁদা আদায়ের অভিযাগও রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, আমদানি পণ্য নিয়ে যেসব ট্রাক লড়ি বাজারের আড়ত গুলোতে আসে প্রতি ট্রাক চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাজারজুড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। হাটের আবর্জনায় ভরে গেছে বাজারের একাংশ এবং এ বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীর তীর।
রাস্তা এবং ফুটপাতে রয়েছে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। এছাড়া বাজারের সবকটি রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী। রিকশা, অটোরিকশা এবং মালামাল বহনকারী ট্রাক পিকআপের কারনে প্রতিদিন বাজারের গলি থেকে আরম্ভ করে কুমিল্লা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ও কোম্পানীগঞ্জ রামচন্দ্রপুর সড়কে সৃষ্টি হয় মারাত্মক যানজট। এতে করে দূরদূরান্ত থেকে আসা পাইকার ভাসমান খুঁচরা বিক্রেতারা পড়েন চরম বিপাকে।
এ ছাড়া এই বাজারে নেই বিশুদ্ধ সুপেয় পানির ব্যবস্থা। বাজারের সবকটি অলি-গলিতে ঝুলছে বৈদ্যুতিক তারের জট। এতে যেকোন সময় ঘটতে পারে অগ্নিকান্ডের মতো বড় ধরনের দূর্ঘটনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আমরা নিয়মিত কর,খাজনা পরিশোধ করেও বাজারের কোন সুবিধা ভোগ করতে পারছিনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক, রাস্তা গুলোতে ময়লা আবর্জনার স্তুপ, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের যথাযথ নজরদরি দাবি করেছেন এ ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা বাজার কমিটি থেকে বেশ কয়েকবার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে ড্রেন নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছিলাম পরে নানা জটিলতার কারনে এ কাজ আরম্ভ করা সম্ভব হয়নি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হওয়ার কারনে বাজারের আগত পন্যবাহী গাড়িসহ ক্রেতারা পরেন নানা বিড়ম্ভনায়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ জানান, বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান পরিষ্কার করে নানা ময়লা আবর্জনা ড্রেনে ফেলে যার কারনে পুরাতন ড্রেনগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না, শীঘ্রই এ বাজারের গরুর হাটের পাশে একটি ড্রেন নির্মাণ কাজ আরম্ভ হবে। তাছাড়া আরো কয়েকটি ড্রেন নির্মাণ করার জন্য এমপি মহোদয়কে জানিয়েছি। যদি সবগুলো ড্রেন নির্মান করা যায় আশা করি বাজারে পানি জমে থাকবে না। বাজারে অনেক দূর-দূড়ান্ত থেকে পন্যবাহী গাড়ি ও ব্যবসায়ীরা আসে কেউ যদি তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে এমন অভিযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।