চৌগাছা প্রতিনিধিঃ যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামের ঐতিহ্যবাহি পীর বলুহ দেওয়ানের মেলাটি আজ শুক্রবার ৪দিন অতিক্রম করেছে। শত শত বছর আগে চালু হওয়া এই মেলাটি প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়, আর ৭ দিন ধরে চলে। অনেক সময় দূর-দূরন্ত থেকে আসা বিক্রেতাদের অধিক মালামাল থেকে যাওয়া এবং ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাহিদা ও ভিড়ের কারণে অনুমতি নিয়ে একমাস সময় নিয়েও চলে মেলাটি।
মেলাটি শত বছরের পুরাতন হবার কারণে এর সুনাম জেলা শহর বাদেও সারা দেশ ছাড়িয়ে গেছে । প্রতিদিন এক নজর মেলাটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছে শত শত নারী, পুরুষ এমন কি বাচ্চারাও । রাত্রে যুবসমাজের অবস্থান বেশি বলে দেখা যায়।
বলুহ মেলার অপেক্ষায় থাকে সারা চৌগাছাবাসীসহ বিভিন্ন থানা ও জেলার লোক। বিশেষ করে সর্ব শ্রেণি পেশার মানুষের যেনো মেলা থেকে ফার্নিচার কিনবে এমন আশা থেকেই যায়। এই মেলার সময় অনেকেই ফার্ণিচার কিনে মেয়ে জামাইকে দেয়। এর জন্য একটি বছর ধরে অপেক্ষায় থাকতে হয় তাদের। এই বলুহ মেলা কেবল হাজরাখানা গ্রামে সীমাবদ্ধ নয়। হাকিমপুর ইউনিয়নেও দেখা যায় বলুহ মেলা হতে। সেখানেও আছে বলুহ পীরের মাজার। তবে হাজরাখানা গ্রামের মেলাটি বৃহৎ আকারে হয়ে থাকে।
হাজরাখানায় এবার বলু দেওয়ানের মেলাটির সব থেকে বেশি নজর কেড়েছে একটি পালঙ্ক। বিক্রেতা যে পালঙ্কের দাম হেকেছেন সাড়ে ৫লক্ষ টাকা। সরেজমিন আজ শুক্রবার সন্ধা সাড়ে ৭টায় হাজরাখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত কাঠের মেলায় গিয়ে দেখা যায়, একটি কাঠের জিনিসের দোকানে উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ঠেলে দেখা যায়, দুইটি পালঙ্ক ঘিরে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড়। পালঙ্কের গায়ে লেখা আছে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা দাম। এতো দামি একটি পালঙ্ক দেখেনি এর আগে অনেকে, তাই উপচে পড়া ভিড় । অনেকে আবার পালঙ্ক ঘিরে ছবি তুলছেন । তবে অনেকের দাবি প্রথমে পালঙ্কটি দেখতে ১০ টাকার টিকিট কেটে দেখানো হতো, তবে সবার জন্য পালঙ্কটি এখন ফ্রি দেখানো হচ্ছে।
সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা হাকানো পালঙ্কটির মালিক রাকিব শেখ (৩১) জানান, কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার বিলকয়িরা গ্রামের বাদশা শেখের পুত্র তিনি । ১৯ বছর আগে তিনি কাঠের কাজ শেখার জন্য পাড়ি জমান পাশের দেশ ভারতে। সেখানে ২ বছর ধরে কাঠের কাজ শিখে ফিরে আসেন নিজ গ্রামে আর গড়ে তোলেন একটি কাঠের গোলা। তিনি দাবি করেন আমার পালঙ্ক জেলার সব থেকে দামি এবং সুন্দর ।
আজকের এই পালঙ্কটির দাম এতো বেশি কেন? জবাবে তিনি বলেন, পালংকটি পুরাটায় সারি কাঠালের কাঠের, গত এক বছর ধরে রোজ ৪-৫ জন শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এটি বানানো শেষ করা হয় ।
এমন দামি একটি পালঙ্ক এর চাহিদা কেমন ? জবাবে তিনি বলেন, গতকাল যশোরের এক ক্রেতা এসেছিলো সাড়ে ৩ লক্ষ দাম বলে গেছে আমি বিক্রয় করেনি। কেমন দাম হলে এটি বিক্রয় করবেন? জবাবে তিনি বলেন ৫লক্ষ টাকা হলে আমি এটি বিক্রয় করবো না হলে বিক্রয় করবো না, তবে কপাল ভালো থাকলে আমি সঠিক দামে এই দুইটি পালঙ্ক বিক্রয় করে ঘরে ফিরবো ।
তিনি আরো বলেন, গত বছর এমন আরো ৩টি পালঙ্ক তিনি বিক্রয় করেছেন একটি ২লক্ষ, একটি সাড়ে চার লক্ষ ও আরেকটি আট লক্ষ টাকায়।
এই মেলায় আগামীতে কি ধরণের পালঙ্কে আপনি আনবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী বছর একটু ভিন্ন একটা পালঙ্ক করবো যার নিচের আকার হবে অনেক বড় একটা নৌকার মতো । নৌকার উপরে থাকবে পালঙ্কটি যা দেখে যে কেউই চমকে যাবে। আনুমানিক পালংকটির দাম পড়বে ১০ লক্ষ টাকার উপরে।