কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে একই পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে তিনজনই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। মাত্র দেড় শতাংশ জমির বসত ভিটায় একটি চালাঘর ছাড়া সহায় সম্বল কিছুই ওই পরিবারের। পনের টাকা কেজির চালের রেশন কার্ড ছাড়া পরিবারটি পায়না আর কোন সরকারী সুযোগ-সুবিধা। পরিবারের কর্তা অন্যের জমিতে দিনমজুরী দিয়ে যা পান তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে চলে ছয় সদস্যের সংসার। তার উপর সন্তানদের অসুস্থ্যতা। তাই চোখের সামনে এক রকম বিনা চিকিৎসায় সন্তানরা ধুকে ধুকে মরতে বসলেও টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা।
হতদরিদ্র ওই দিনমজুর পিতার নাম রফিকুল ইসলাম (৪৫)। তিনি উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের মধ্য রাবাইতারী গ্রামের মৃত আনছার আলীর ছেলে।
সরেজমিনে রফিকুল ইসলামের বাড়ীতে গেলে দেখা যায়, চার সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান আবু হাসান (২৩), দ্বিতীয় সন্তান আবু হোসেন (১৯), তৃতীয় সন্তান হাসু মিয়া (১৬) জন্ম থেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। শুধুমাত্র সব ছোট ছেলে সাজু মিয়া (৮) সুস্থ আছে। বয়স অনেক হলেও চেহারা ও আকৃতিতে তিন জনকেই শিশুর মত দেখা যায়। মাস খানেক আগে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট- বাজারসহ মানুষের দারে দারে ভিক্ষা করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বড় ছেলে আবু হাসানের অপারেশন করা হয়েছে। অপারেশনে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। চারদিন হলো তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে এসেছেন। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি। ২য় সন্তান আবু হোসেন অসুস্থ শরীর নিয়ে পাশ্ববর্তী বটতলা বাজারে অন্যের দোকানে মাসিক দুই হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। প্রতি মাসে ২য় সন্তান আবু হোসেন ও ৩য় সন্তান হাসু মিয়ার শরীরে এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে হয়। ডাক্তার বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ী ওই দুজনেরই অপারেশন করা দরকার। তাতে খরচ লাগবে প্রায় তিন লাখ টাকা। এতো টাকা কিভাবে জোগাড় করবেন তা নিয়ে চরম দুচিন্তায় পড়েছেন রফিকুল ইসলাম।
রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হাজরা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বিক্রি করার মত কিছুই নেই আমাদের। টাকার অভাবে ছেলেদের চিকিৎসা বন্ধের পথে। চোখের সামনে সন্তানদের এ করুন পরিণতি আর সহ্য হয়না। তাই সন্তানদের বাঁচাতে সমাজের দানশীল হৃদয়বান ব্যক্তি ও সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। সাহায্য পাঠানোর বিকাশ নম্বর (আবু হাসান ০১৩২৪১৩২৩১৪)।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডাঃ সুমন কান্তি সাহা বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের শরীরে রক্ত দিতে হয়। নিরাময় না হলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান, ওই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সর্বাত্বক সহযোগিতা করা হবে।