লকডাউনের সময়ে চীনের উহান শহরের দুটি হাসপাতালের বাতাসে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা। হাসপাতালগুলো থেকে নেয়া বাতাসের নমুনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্যের (আরএনএ) উপস্থিতি মিলেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বাতাসের ওই কণাগুলোর বেশিরভাগেরই ব্যাস এক ইঞ্চির দশ হাজার ভাগের এক ভাগেরও কম। করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, এ ধারণার পক্ষে চীনা বিজ্ঞানীদের এ তথ্যকে শক্তিশালী প্রমাণ বলা হচ্ছে।
এর আগে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে করা গবেষণায় করোনাভাইরাস বাতাসে থাকতে পারে বলে প্রমাণ মিললেও চীনা বিজ্ঞানীরা নমুনা নিয়েছেন বাস্তব পরিস্থিতি থেকে। সোমবার নেচার সাময়িকীতে চীনা বিজ্ঞানীদের এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা যে নমুনা সংগ্রহ করেছেন সেখানে থাকা ভাইরাস সংক্রামক কিনা তা এখনো জানা যায়নি, তবে ক্ষুদ্র এ তরলকণাগুলো সহজেই ব্যক্তির নিঃশ্বাসের সঙ্গে ও কথা বলার সময় নির্গত হতে পারে। কণাগুলো ভাসতে পারে ও শ্বাসের মাধ্যমে অন্য জনের শরীরে ঢুকেও পড়তে পারে।
নেচারের ওই গবেষণা নিবন্ধের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক অ্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক লিনসে মার বলেছেন, “তরলকণাগুলো অন্তত দুই ঘণ্টা বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। এ প্রতিবেদনে জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, ভাইরাসটির বায়ুর মাধ্যমে ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে।”
নতুন করোনাভাইরাসটি যে এরোসল নামে পরিচিত অতি ক্ষুদ্র তরলকণার মাধ্যমে ছড়াতে পারে, এমন প্রমাণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন মার ও অন্য আরও অনেক বিজ্ঞানী। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখনও পর্যন্ত বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনাকে আমলে নেয়নি। তারা বলছে, বাতাসে বেশিক্ষণ ভাসতে পারে না এমন বড় বড় তরলকণার মাধ্যমেই ভাইরাসটি ছড়াতে পারে অথবা সংক্রমিত কোনো কিছু ছোঁয়ার মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
চীনা বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণাতেও এরোসলে থাকা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটানোর মতো সক্ষমতা আছে কি না, নাকি তাদের পরীক্ষায় ভাইরাসের নির্বিষ খণ্ডাংশ পাওয়া গেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। “ভাইরাসের প্রতিলিপির জন্য অনুপস্থিত খণ্ডাংশটি গুরুত্বপূর্ণ,” মন্তব্য করে স্ট্যান্ডিং কমিটি অব ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ এর প্রধান হার্ভি ভি. ফাইনবার্গ প্রশ্ন রাখেন, “বাতাস থেকে কী আপনি এই ভাইরাসটি উৎপাদন করতে পারবেন?” উহানে এ গবেষণায় চীনা বিজ্ঞানীরা আবাসিক ভবন ও সুপারমার্কেটের বাতাসে ভাইরাসের উপস্থিতি পাননি।
তবে দুই হাসপাতালের একটির বাইরে ভিড়ঠাসা এলাকা ও কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরের বাতাসেও সামান্য মাত্রার ভাইরাস পাওয়া গেছে। “ভিড় এড়িয়ে চলার জন্য বেশ ভালো প্রমাণ হাজির করা হয়েছে,” বলেছেন মার।
সুত্রঃ নিউ ইয়র্ক টাইমস।