৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরা শুরু করেছেন জেলেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পটুয়াখালীর কুয়াকাটার মহিপুর-আলীপুর মৎস্যবন্দরে ইলিশভর্তি ট্রলার এসে ভিড়ছে। ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় পাইকারিতে ইলিশের দামও কমে গেছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে মৎস্যবন্দরে ব্যবসায়ীরা অলস সময় কাটার পর আবার ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। মুখর হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা-মহিপুর-আলীপুর মৎস্যবন্দর।
গতকাল সকালে সরেজমিনে মৎস্যবন্দর মহিপুর ও আলীপুরে দেখা যায়, সাগর থেকে ইলিশবোঝাই ট্রলারগুলো মৎস্যবন্দরে ভিড়ছে। বন্দরের আড়তদারেরাও ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ট্রলার থেকে ঝুড়িতে করে শ্রমিকেরা ইলিশ এনে আড়তে ফেলছেন। মাপজোখ চলছে। দরদাম করে কিনছেন পাইকারেরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য কার্টন ভর্তি করা হচ্ছে।
মহিপুর মৎস্যবন্দরের মাছের আড়তদারেরা জানান, ভোর ৫টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অন্তত ৫০টি ইলিশবোঝাই ট্রলার বন্দরে এসেছে। এখনো আসা অব্যাহত রয়েছে। ঝিমিয়ে থাকা মৎস্যবন্দর এখন জেগে উঠেছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার জেলে আবুল কাসেম বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরে সংসার চালাই। ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার কারণে খুব কষ্ট করে সংসার চলছিল। নিষেধাজ্ঞার এক দিন আগেই সাগরে রওনা দেই। মঙ্গলবার জাল ফেললেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। তাড়াতাড়ি সাগর থেকে চলে এসেছি। মাছ বিক্রি করে আবার সাগরে যাচ্ছি ইলিশ ধরতে।’
মহিপুরের জেলে কালাম শরীফ বলেন, ‘৬৫ দিন মাছ ধরি নাই। খুব কষ্টে ছিলাম। এখন মাছ পড়ছে ভালো। কোরবানির ঈদের আগে আরও দু-তিনবার সাগরে যেতে পারলে এবং যদি এ রকম মাছ ধরা পড়ে, তাহলে ভালোই হবে।’
মহিপুর মৎস্যবন্দরের রিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মোস্তফা বলেন, দীর্ঘদিন পর সাগরে ইলিশ পড়ছে। ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় দামও কমে গেছে। ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ ছিল ৩০ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা (প্রতি কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা)। এখন তা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৮ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা (প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা)।
মহিপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফজলু কাজী বলেন, ‘আমরা সাগরে মাছ না ধরলেও ভারতীয় জেলেরা অবাধে সাগর থেকে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে আমাদের জলসীমায় অন্য কোনো দেশের জেলেরা প্রবেশ করতে না পারে। তাহলে মাছের সুরক্ষার পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। জেলেরা উপকৃত হবে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ্ বলেন, ‘এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। শুনেছি, জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা জেলেরা মেনে চললে ভবিষ্যতে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে জেলেরা আগের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।’
সুত্র : প্রথম আল