গত বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযান করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসা থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মূলত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় করা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তাদের গ্রেপ্তার কড়া হয়েছে।
১৫ সেপ্টেম্বর গত বুধবার রাত ১২টার দিকে আরিফ বাকের নামে এক ভুক্তভোগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন জমা দেন। আর বৃহস্পতিবার অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গুলশান থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) অনিন্দ্য।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায় যে, ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে লোভে পড়ে আরিফ বাকের ও তার কয়েকজন বন্ধু চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। আর সব পণ্যের জন্য নির্ধারিত টাকাও তারা অগ্রিম পরিশোধ করেন। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি করার কথা থাকলেও দিনের পর দিন পার হয়ে গেলেও পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি ইভ্যালি। তাই তারা বাধ্য হয়ে পরবর্তীতে গত ৯ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে পণ্য চাইতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ভুক্তভোগীকে পণ্য বুঝিয়ে না দিয়ে বরং ভয়ভীতি দেখান।
এছাড়াও গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অত্র প্রতিষ্ঠানের সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী নাসরিন এর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেয়। এছাড়া গত ১৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ ১০ টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত কমিটি ।
আর ১৩ আগস্ট ইভ্যালিকে চিঠি দিয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত কোম্পানির সম্পদ ও দায়ের বিবরণ, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির দেনার বিবরণ জানতে চায় বলে নোটিশ পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তখন সময় চেয়ে আবেদন করে ইভ্যালি। তবে সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ২৬ আগস্ট দেওয়া হিসেবে ইভ্যালি জানিয়েছিল, গ্রাহকরা তাদের কাছে ৩১১ কোটি টাকা পাবেন।
গ্রাহকের পাওনার সমপরিমাণ টাকা পণ্য কেনার জন্য অগ্রিম মূল্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে। এর আগে ১৯ আগস্ট ইভ্যালি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের এই দায় ও সম্পদের তথ্য দেয়।
ওই সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর জুলাই মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অগ্রীম যে টাকা নিয়েছে তার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে এ বছরের জানুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে যে পণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রে ইভ্যালি আইন ভঙ্গ করেছে।
এর পর জুন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তদন্ত দল ইভ্যালির কার্যক্রমের কিছু অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিল করে।