মোঃ সদরুল কাদির (শাওন), স্টাফ রিপোর্টার :- ২০১১ সাল থেকেই ইভিএম ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে বেশ অনেক জল্পনা কল্পনা শুনেছি। এই মেশিনের খুটিনাটি জানার আগ্রহ আমার অনেক আগে থেকেই । ২০১১ সালে খুলনা সিটি নির্বাচনে প্রথম আমি এই মেশিনের সাথে পরিচিত হই। তখন একে ইভিএম মেশিন বা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বলা হতো মাঝখানে মেশিনটির আরও সংস্কার করে এর নামকরণ করা হয়েছিলো ডিভিএম বা ডিজিটাল ভোটিং মেশিন বর্তমানে ডিভিএম নাম বাদ দিয়ে আরও আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে এই মেশিন এবং নামকরণ করা হয়েছে ইভিএম বা ইলেক্ট্রনিক্স ভোটিং মেশিন। এই মেশিনের খুটিনাটি বিষয়ে গত কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া উন্নয়ন মেলায় প্রচারের কাজে আমিসহ আমাদের কয়েকজন দায়িত্বরত ছিলাম তাই প্রচারের আগে অনেককিছু ঘাটাঘাটি করে বুঝে নিতে হয়েছে। কাজের কথায় আসি । এই লেখাটা কেবলই ইভিএম মেশিন ও ভোটগ্রহণ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য। ইভিএম পদ্ধতি কি? সহজ ভাষায় বলতে গেলে ইভিএম মেশিন হচ্ছে প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থাপনা যেভাবে চালু আছে তারই একটি যান্ত্রিক রুপ যা সর্ম্পুণ কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে। ইভিএম মেশিন সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে ম্যানুয়েল পদ্ধতি যেভাবে বর্তমানে ভোটদান পদ্ধতি চালু আছে। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ভোটদান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটদান নিয়ে নানা কনফিউশন তৈরী হতে পারে। যেকোন নির্বাচনে দুটি কার্যক্রম সম্পাদন করা হয় প্রথমত নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব দ্বিতীয়ত ভোটার হিসাবে দায়িত্ব। নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব অনেক বেশি নির্বাচনী কর্মকর্তাকে রির্টার্নিং অফিসারের কাছ থেকে নির্বাচনের পূর্বেরদিন মালামাল বুঝে নেওয়া থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষনা পর্যন্ত সকল কার্যক্রম অত্যান্ত সাবধানে সম্পাদক করতে হয় । আর একজন ভোটারের কাজ হচ্ছে নিজের ভোটার নম্বরটি খুজে নিয়ে নির্ধারিত ভোট সেন্টারে গিয়ে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে ভোট দেওয়া। বর্তমান পদ্ধতিতে ভোটারের করনীয়ঃ ভোটারকে তার ভোটার নম্বরটি সংগ্রহ করে ভোটকেন্দ্রে যেতে হয় ভোটকেন্দ্রের বুথে থাকা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটার তালিকায় ভোটারের নাম যাচাই করেন এবং বুথে উপস্থিত পোলিং এজেন্টদের শনাক্ত করতে বলেন পোলিং এজেন্টগণ কোন আপত্তি না করলে উক্ত ভোটারের জন্য সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নির্দিষ্ট ( সাধারণত ৩টি) কয়েকটি ব্যালট ইস্যু করেন এবং ব্যালটের মুরি বইয়ে ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ নেন (ব্যালট নিশ্চিত করার জন্য)। দায়িত্বরত পোলিং অফিসার ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালী লাগিয়ে দেন ভোটারকে চিহ্নিত করে দেন। এবং ভোটার ব্যালট পেপার নিয়ে গোপনীয় কক্ষে চলে যান এবং পছন্দের নাম ও প্রতীকের পাশে সীল দিয়ে ব্যালট ভাজ করে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে রাখা ব্যালট বাক্সে নিজ হাতে ব্যালট জমা দিয়ে ভোট দান সম্পন্ন করেন। এভাবে সকাল ৮.০০ হতে বিকাল ৪.০০ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে এবং সকল ভোট গ্রহণ সমাপ্ত হলে উপস্থিত কর্মকর্তাগণ এবং প্রার্থী কর্তৃক নিয়োগকৃত পোলিং এজেন্টদের সামনে প্রিজাইডিং অফিসার বাক্স খুলেন এবং কোন প্রার্থীর বিপরিতে কোন ব্যলট তা শনাক্ত করেন ব্যালট শর্টিং কার্যক্রম শেষ করেন এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাগণ ব্যালট ম্যানুয়েলী গণণা করেন তারপর নির্ধারিত ফরমে তা এন্ট্রি করেন। ব্যালট গণনা শেষ হলে প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্রের বেসরকারীভাবে উক্ত কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষনা করেন। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটদান: এই পদ্ধতিতে ভোটারকে তার ক্রমিক নম্বর কেন্দ্রে আনার প্রয়োজন হবে না। ভোটার কেবল তার স্মার্ট কার্ড অথবা ভোটার নম্বর তাও না থাকলে সরাসরি কেন্দ্রে উপস্থিত হলেই ভোটদান করতে পারবে। ইভিএম মেশিনে তিন ভাবেই ভোটারকে আইডেনটিফাই করার সুযোগ আছে। ভোটার যদি স্মার্ট কার্ড বা ভোটার নম্বর কিছুই বলতে না পারে সেক্ষেত্রে কেন্দ্রে উপস্থিত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তার আঙুলের ছাপ ইভিএম মেশিনে পরীক্ষা করবেন। ইভিএম মেশিনে ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার সাথে সাথে ব্যক্তি যদি উক্ত ভোট কেন্দ্রের ভোটার তালিকাভুক্ত হয়ে থাকে তাহলে ইভিএম মেশিনের সাথে স্থাপিত বড় ডিপ্লেতে তার ছবিসহ তথ্যাদি দেখা যাবে । সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারগণ উপস্থিত পোলিং এজেন্টদের ভোটারকে শনাক্ত করতে বলবেন কেবলমাত্র পোলিং এজেন্টগণ কোন আপত্তি না করলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে ভোটদানের জন্য ব্যালট ইউনিট একটিভ করে ভোটদানের অনুমতি দিবেন। অনুমতি পাওয়ার পর ভোটার ভোটদানের উদ্দেশ্য গোপন কক্ষে প্রবেশ করবেন এবং গোপন কক্ষে ডিজিটাল ব্যালট ইউনিট দেখতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যালট ইউনিটে ভোটার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাথীদের নাম এবং প্রতীক দেখতে পারবেন। ভোটার যে প্রতীকে ভোট দিতে চান তার বাম পাশে থাকা বাটনে চাপ দিবেন তারপর ভোট নিশ্চিত করার জন্য ডান পাশে থাকা সবুজ বাটনে চাপ দিবেন। ভোট নিশ্চিত করার জন্য সবুজ বাটনে চাপ দেওয়ার সাথে সাথে আপনার ভোটটি নিশ্চিত হয়ে যাবে। এভাবে চেয়ারম্যান, সাধারণ আসন এবং সংরক্ষিত আসনে ভোট প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে সবুজ বাটনে চাপ দেওয়ার পর ভোটার আর যতই চেস্টা করুক নতুন করে আর ভোট প্রদান করতে পারবেন না। একজন ভোটার ভোট দেওয়া শেষ করলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে থাকা কন্ট্রোল ইউনিটে ম্যাসেজ দেখাবে আপনার ভোটটি সম্পন্ন হয়েছে। সাধারণ জিজ্ঞাসা: প্রশ্নঃ ইভিএম পদ্ধতি একাধিকবার ভোট দেওয়ার সুযোগ আছে কি না? উঃ ইভিএম পদ্ধতিদে একাধিকবার ভোট দেওয়ার কোন সুযোগ নাই। আপনার আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষার মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয় বলে এই পদ্ধতিতে পূর্বে আপনি একবার উক্ত কেন্দ্রে ভোটদান করে থাকলে নতুন করে ভোট দিলে ইভিএমএর কন্ট্রোল ইউনিট ম্যাসেজ দিবে আপনি ইতিপূর্বে একবার ভোট দিয়েছেন। প্রশ্নঃ ইভিএম মেশিন দুরথেকে কন্ট্রোল করা যায় কি না? উঃ ইভিএম মেশিন সম্পূর্ণ অফলাইনে কাজ করে এরসাথে কোন ওয়াই ফাই বা মডেম এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া থাকে না ফলে দুর থেকে একে কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়। প্রশ্নঃ ইভিএম মেশিনে কে কোন প্রতীকে ভোট দিয়েছে জানা যায় কি না? উঃ ইভিএম মেশিনে কে কোন প্রতীকে ভোট দিয়েছে তা জানার কোন সুযোগ নাই। ইভিএম মেশিন কেবলমাত্র প্রতীকের বিপরীতে ভোটারের ভোট গণণা করে সংখ্যাগত ফলাফল প্রিন্ট করার সুযোগ রাখা হয়েছে। কোন ভোটার কি প্রতীকে ভোটদিচ্ছেন তা জানার কোন সুযোগ নাই কারণ ব্যালেটের পাশে প্রতীক নির্বাচন করতে আঙ্গুলের ছাপ দিতে হয় না। আঙ্গুলের ছাপ কেবল ভোটার কে শনাক্ত করার কাজে নেওয়া হয়ে থাকে যা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতেও নেওয়া হতো। প্রশ্নঃআমার ভোট যে গৃহিত হয়েছে আমি কিভাবে বুঝবো? উঃ ভোটার যখন গোপন কক্ষে গিয়ে ইভিএম মেশিনে তার পছন্দের প্রতিকে চাপ দিয়ে সবুজ বাটন চেপে ভোট নিশ্চিত করবেন সাথে সাথে তার পছন্দের প্রতীক ছাড়া অন্য সকল প্রতিক মুছে যাবে এবং ভোটার একটি শব্দ শুনতে পারবেন যে আপনার ভোটটি গৃহিত হয়েছে। প্রশ্নঃ যদি কেন্দ্রে বিদ্যুত না থাকে তাহলে ইভিএম মেশিনে কিভাবে ভোটগ্রহণ হবে? উঃ ইভিএম মেশিনে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যান্ত শক্তিশালী ব্যাটারী যা প্রায় ৩০ ঘন্টার অধিক ব্যাকআপ দিতে সক্ষম ফলে কেন্দ্রে বিদ্যুত না থাকলেও ইভিএম তার কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালাতে পারবে। প্রশ্নঃ কেউ যদি তার স্মাট কার্ড বা ভোটার নম্বর কেন্দ্রে আনতে ভুলে যায় সেকি ভোট দিতে পারবে? উঃ ইভিএম মেশিনে আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটারকে শনাক্ত করার সুযোগ আছে বলে যদি কেউ তার স্মার্ট কার্ড হারিয়ে ফেলেন বা সাথে আনতে ভুলে যান ভোট দিতে পারবেন। তবে যদি কারও হাতের আঙ্গেলে কোন সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে ভোট দিতে অবশ্যই ভোটার নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সাথে আনতে হবে। প্রশ্নঃ ইভিএম মেশিনে পূর্ব হতে ভোটগ্রহণের কোন সুযোগ আছে কি না? ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে পূর্বে হতে ভোটগ্রহণের কোন সুযোগ নাই প্রধানত ইভিএম মেশিনটি ভোটদানের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পর ভোটগ্রহণের দিন সকাল ৮.০০ টার পূর্বে ইহা দ্বারা কোন ভোট প্রদান করা যাবে না। মেশিন অটোমেটিক লক অবস্থায় থাকবে। কেবল মাত্র সকাল ৮.০০ টা বাজলেই মেশিন ভোটগ্রহণের জন্য নিজেকে আনলক করবে এবং যথারীতি ভোট গ্রহণ শুরু করা যাবে। এর পূর্বে প্রতিটি ভোট কক্ষে রাখা ইভিএম মেশিনটি সয়ংক্রিয়ভাবে একটি ফলাফল প্রিন্ট করে দেখাবে যাতে সকল প্রার্থীর নাম ও প্রাপ্ত ভোটের ফলাফল থাকবে। যদি প্রার্থীদের প্রতীকের পাশে প্রাপ্ত ফলাফল শুন্য থাকে তবে উপস্থিত সকলে বুঝবে কোন প্রার্থীর বিপরিতে কোন ভোট পূর্বে হতে প্রদান করা হয় নাই। এই ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল চুড়ান্তভাবে ভোটগ্রহন শুরু হবে। ইভিএম মেশিনে কেন্দ্র হতে ফলাফল পরিবর্তনের কোন সুযোগ নাই। প্রশ্নঃ ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণে কি অর্থ এবং সময় উভয় সাশ্রয় হবে? অবশ্যই ইভিএম মেশিনে ব্যালট বাক্স, বস্থা, ব্যালট পেপার, কালি, সীল, অন্যান্য মালামাল ভোটকেন্দ্রে নেওয়া প্রয়োজন নাই। ফলে কেন্দ্রে মালামাল পরিবহন ঝামেলা তুলনামুলক কম হবে এবং অতিরিক্ত মালামাল বার বার কেনার প্রয়োজন পড়বে না বিধায় খরচও অনেক হবে আর ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ভোটগণণা ও ভোটার নম্বর দিয়ে সার্চ করার প্রয়োজন হবেনা বলে খুব দ্রুতই ভোট গ্রণক ও ফলাফল প্রদান করা সম্ভব হবে। ইভিএম মেশিন নিয়ে নানান জনের নানান জল্পনা কল্পনা থাকলেও কেউ যদি এই মেশিনে একবার স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ভোটপ্রদান করে তাহলে নিশ্চিত তার সকল কনফিউশন দুর হয়ে যাবে। আর যদি কারও প্রযুক্তি বিষয়ে অল্প জ্ঞানও থাকে সেও এই মেশিনটি নিজে ব্যবহার করলে আশা করি অনেক ভুল ধারনা ভেঙ্গে যাবে। মেশিনটি দেখার জন্য এবং এবিষয়ে জানার জন্য যেকোন জেলা সার্ভার স্টেশন ভিজিট করতে পারেন।