তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: ভারী বর্ষণ আর উজানের পানিতে ডুবেছে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বসতবাড়ি। এ অবস্থায় বন্যাদুর্গত মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। এর মধ্যে শনিবার (১৯ জুন) জুড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেন প্রসূতি আলেখা বেগমসহ (৩৫) পরিবারের অন্য সদস্যরা। পরে বুধবার (২২ জুন) আলেখার কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে শিশু সন্তান। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে “প্লাবন”।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলেখাদের বাড়ি জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তার স্বামী সোহেল মিয়া ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। তাদের আরও এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে।
আলেখার স্বামী সোহেল মিয়া বলেন, সোমবার দিবাগত রাত পৌঁনে ২টার দিকে স্ত্রী প্রথমবার প্রসবব্যথা অনুভব করেন। পরে জুড়ী থানা-পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত তাকে পুলিশের ভ্যানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ, পানি, নার্স না থাকার কথা বলে রোগীকে পাশের উপজেলা কুলাউড়ায় অথবা বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে বলেন সেখানকার দায়িত্বরত এক চিকিৎসক। তবে বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় কুলাউড়া অথবা বড়লেখায় যাওয়া সম্ভব ছিল না। এছাড়া গভীর রাত হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও কোনও গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারিনি। তেলসংকটে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সও বিকল হয়ে পড়ে আছে বলে জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন। নানা দুশ্চিন্তায় সেখানেই রাত কাটে। এ অবস্থায় পরদিন মঙ্গলবার সকালে আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে আসি।
তিনি আরও বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পর ছালেহা বেগম নামের পরিচিত এক ধাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার সহযোগিতায় আলেখা সন্তান জন্ম দেয়। দুর্যোগ সময়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখ ভোলার নয় বলে জানান তিনি।
পরে বিকালে উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সমরজিৎ সিংহ বলেন, খবর পেয়ে নবজাতক ও প্রসূতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তারা উভয়ই সুস্থ আছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রীও নবজাতকের খোঁজ নিয়েছেন। আমরাও খোঁজ রাখছি।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার বিষয়ে প্রসূতির স্বজনদের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেন গাফলাতি হল- এ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জায়ফর নগর ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মাসুম রেজা বলেন, শুনেছি আশ্রয় কেন্দ্রে নবজাতকের জন্ম হয়েছে। পানি কমলে দেখতে যাবো।