১৯৭১ সাল। চারদিকে যুদ্ধ চলছে। এর মাঝে একদল কিশোর তারা আলাপ করছে কিভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানের ক্যাম্প থেকে বাঁচানো যায়। যেই কথা সেই কাজ। ওদের অভিযান চালিয়ে নিয়ে যেতেই হবে, যদিও প্রয়োজনীয় অস্ত্র শস্ত্র কিছুই নেই তাদের সাথে। তারপরও রাশেদ খুবই সাহসী এক কিশোর।
এমনি এক কিশোর দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প আমার বন্ধু রাশেদ। খুব সহজেই আমরা এই দেশ পাইনি, খুব সহজেই অর্জিত হয়নি এই স্বাধীনতা। ৯ মাস রক্তহ্ময়ী যুদ্ধের পর এই অর্জন আমরা আনতে পেরেছি। একবারও ভেবে দেখেছেন যারা কিশোর তাদের মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল? তবে এও ঠিক ওই সময় আমাদের কিশোররা অনেক সাহসী ছিল। তারা যুদ্ধ করার মত সাহস রাখত, তারা মাকে পাহারা দেওয়ার কথা চিন্তা করত। যতটা তাদেরকে দেখতে সহজ সরল লাগত ততটা তারা ছিল অদম্য সাহসি।
ইতিহাস অনেক কিছু আমাদের শিখায়। তাই ইতিহাস থেকেও আমরা শিখতে পারি কিভাবে একটা কিশোর তার জীবনকে পরোয়া না করে জয় বাংলা বলতে সাহস করে। কিভাবে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে রাতের অন্ধকারে নৌকা পারি দেয়। আমাদের এই যান্ত্রিক যুগে আমরা হয়তো এত কিছু চিন্তাও করতে পারবো না, চিন্তা করতে পারবো না কিভাবে সাহস নিয়ে নিজের ভিটাকে বাঁচানোর জন্য রুখে দাড়াতে হয়। অতীত কে ভুলে যেমন বর্তমান ভাবা যায় না তেমনি বর্তমানকে সমৃদ্ধ করতে হলে আমদের নিজেকে জানা, নিজের দেশকে জানা অনেক প্রয়োজন। সঠিক ইতিহাস জানতে হলে মুক্তিযুদ্ধের এই ছবিগুলোর বিকল্প আর কিছুই নেই।
কয়েকজন বন্ধু ওরা। একসাথে স্কুলে যায়, একসাথে আড্ডা দেয়, একসাথে খেলাধুলা করে, একসাথে তারা চলাফেরা করে। তারমাঝে রাশেদ কিছুটা অন্যরকম, স্বল্পভাষী, রাজনিতির ব্যপারে সে অনেক কিছু জানে, অন্য কারও সাথে সে যেন মিলেই না। লেখাপড়ার চেয়ে রাজনীতির বিষয়টি তার কাছে বেশি জানা যায়। ক্লাসে নতুন আস্তে না আসতেই এক জন সুঠাম দেহী কিশোরের সাথে তার মারামারি শুরু হয়ে যায়। দুইজন দুই জনের জন্মের শত্রু। কিন্তু যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় তখন সে হয়ে যায় একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মাঝে পারস্পরিক মিল হয়ে যায়, দুইজনই বন্ধু হয়ে যায়। কি অসাধারণ এই সম্পর্ক গুলো। দেশকে বাঁচানোর জন্য আমরা সবাই এক।
সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য হল যখন রাশেদের কাছ থেকে তার সত্যিকার ভালো বন্ধুটি আলাদা হয়ে যায়। কিছুই করার ছিলনা ওদের কারন বাবা মায়ের সিদ্ধান্ত। তারপর রাশেদকে রাজাকাররা নির্মমভাবে হত্যা করে। মৃত্যুর আগে পাকিস্তানি রাজাকার তার মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিল ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ কিন্তু সে পিছপা হয়নি, সে বলেছিল “জয় বাংলা” । আর সাথে সাথেই গুলি করেছিল তার পায়ে তারপর তার বুকে। এই পুরো কাহিনী এক বাবা তার ছেলেকে বলে আর সেই ছিল রাশেদের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।
শারমিন সোলতানা