সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাজেটে কোথায় ব্যয় করছি, সেখান থেকে আমরা কী পাচ্ছি এসব বিচার করা দরকার। আদৌ কোনো রিটার্ন পাচ্ছি কি না, দেখা দরকার। আমরা বাস করি ভূতলে, বিনিয়োগ করি পাতালে। এই প্রবণতা নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে।
বুধবার (১২ জুন) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বাজেট সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
এমএ মান্নান বলেন, রাজনৈতিকভাবে দলে (আওয়ামী লীগ) ও সংসদে আছি। সাধারণ মানুষ ও গ্রামীণ এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছি। আমরা গ্রামে বিদ্যুৎ পেয়েছি, কমিউনিটি ক্লিনিক পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এসব দিয়েছেন। কৃষিতে আমাদের বিশাল অর্জন হয়েছে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি আমাদের কষ্ট দেয়। কিন্তু আমার কমনসেন্স বলছে, আমাদের মূল্যস্ফীতি লতানো, পায়ে পায়ে এগুচ্ছে। আমার মনে হয় প্রবৃদ্ধির একটা বাই প্রোডাক্ট এই মূল্যস্ফীতি। একটাকে ছেড়ে আরেকটা করা যাবে না। প্রবৃদ্ধি না করলে আমাদের জীবনযাত্রার মান নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে যাবে। এই ঝুঁকি আমাদের নিতে হবে। বড় অর্থনীতির দেশগুলো এই প্রক্রিয়ার মাঝখান দিয়ে গেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ বছরের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, বাজেটে কোথায় ব্যয় করছি, সেখান থেকে আমরা কী পাচ্ছি—এসব বিচার করা দরকার। আদৌ কোনো রিটার্ন পাচ্ছি কি না, দেখা দরকার। এমন প্রকল্প আমার হাত দিয়ে গেছে বা যাচ্ছে যেগুলোর সঙ্গে আমি মনেপ্রাণে একমত নই। টিমওয়ার্ক করেছি, আমি না চাইলেও টিম লিডার হিসাবে সেটা করতে বাধ্য হয়েছি। আমরা বাস করি ভূ-তলে, বিনিয়োগ করি পাতালে। এই প্রবণতা নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে। এটা আমার নিজের বক্তব্য।
আগের বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার তেমন বাড়েনি উল্লেখ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এটা সরকারও বলছে। কিন্তু সুশাসন ও উন্নয়ন কৌশলের ক্ষেত্রে বাজেটে বড় ধরনের ঘাটতি আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি সন্ধিক্ষণে আছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হচ্ছে, আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সন্ধিক্ষণে। আমাদের সম্পদের যতই সীমাবদ্ধতা হোক, আমাদের আরও সাহসী, আরও কৌশলী, আরও সৎ হওয়ার সুযোগ ছিল। আমাদের সেই উচ্চতর আকাঙ্ক্ষা বাজেটে প্রতিফলন হওয়া দরকার ছিল, বাজেটে সেভাবে আমাদের ভূমিকা নেওয়া দরকার ছিল।
বাংলাদেশ এখন একটি অদক্ষতার ফাঁদে আটকে আছে উল্লেখ করে ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যুগলবন্দি বিনিয়োগের প্রয়োজন। স্বাস্থ্য খাতে ৫০০ বেডের হাসপাতাল হয়ে গেল। কিন্তু সেবা দেওয়া হচ্ছে ৫০ বেডের হাসপাতালের। এই যে অবকাঠামো ও সেবার যে সমন্বিত উদ্যোগ সেটাও নেই।
তিনি বলেন, বড় ধরনের উন্নয়ন চালিয়ে যেতে পারছি, সেটা খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকার কারণে। কৃষি খাতের ভালো উৎপাদনের কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু গত ১৫ বছর যদি লক্ষ্য করা যায়, তাহলে দেখা যাবে ১০/১১ শতাংশ খাদ্য আমাদের অবশ্যই আমদানি করতে হয়। কৃষিতে আরও কাজ করা সম্ভব। কিন্তু কৃষিতে গতানুগতিক চিন্তা করা হচ্ছে। কৃষকের যে প্রয়োজন সেটা পাচ্ছে না।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা ত্রিশ বা চল্লিশ বছর দুইটি উন্নয়ন চালকের ওপরে দাঁড়িয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। একটি হলো পোশাকশিল্প, আর অপরটি হলো প্রবাসী আয়। এই দুইটি খাতের সম্ভাবনা একটি পর্যায়ে এসেছে, আর কতদূর যেতে পারবে সেটা দেখার বিষয় আছে। এখন ভবিষ্যতের গ্রোথ ড্রাইভার খুঁজতে হবে। এজন্য ইতোমধ্যে অনেক কিছু হচ্ছে, কিন্তু উদ্যোগগুলো অসম্পূর্ণ, অসমাপ্ত ও অগোছালো।
প্রথম একটি পদক্ষেপ নেওয়া হলো, পরের ১০টি উদ্যোগের আর খবর নেই। আমরা দেখছি আইসিটি মন্ত্রণালয়ে থেকে অনেকগুলো অ্যাপ খোলা হয়েছে, কয়েকটি কাজে দিয়েছে। যখন জিজ্ঞাসা করা হলো ব্যবহার কেমন হলো, তখন বলা হলো ওইটা দেখা দায়িত্ব তাদের নয়। এক্ষেত্রে আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মন্জুর এলাহীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম