অনৈতিকতা যখন ভর করে মানবতা তখন লংঘিত হবেই। শ্রম আর মেধা থাকলে যে কেউ ভালভাবে জীবন কাটাতে পারে কিন্তু, অর্থলোভ মানূষকে অমানবিক করে তোলে। সেই লিপ্সাটিই এখন বাংলাদেশের মানূষের মধ্যে জেঁকে বসেছে। “আরও চাই” মনোবৃত্তিটি মানূষকে যেন তাড়া করছে। যে যেভাবে পারছে অর্থসম্পদের পিছে ছুটছে পাগলের মত। মূখে নীতিকথা বলে অনৈতিকতার ঘোড়ায় বসে ছুটছে অবিরাম। এই জন্যই এখন গ্রামের মানূষগুলি অপেক্ষাকৃত ভাল আছে। বিলাসিতা নেই কিন্তু সূখ আছে গ্রামে। ঢাকা শহরের বাড়ীভাড়া এখন এমেরিকা কানাডার চেয়ে কমনা বরং কোথায়ও কোথায় বেশী। এত ভাড়া দিয়ে যারা ঢাকায় বসবাস করেন তাদের আয়ের উৎস কি, তার খোজ করলেই অনেক অনৈতিকতার খোজ পাওয়া যেত কিন্তু, কে করবে তা? ঢাকার যানজটের কারন গাড়ীর আধিক্য। কারো কারো বাড়ীতে একাধিক গাড়ীও রয়েছে এবং তা সাধারন গাড়ী নয়। কোনটার মূল্য ৫/ ৬ কোটিও আছে। বিশ্বের নামিদামি ব্রান্ডের এমন কোন গাড়ী নেই যা ঢাকার রাস্তায় দেখা যায়না। এবং মুল্যের সংগে ৩০০% টেক্স দিয়েও নতুন গাড়ী নিয়ে আসে বিমানে। অপেক্ষা করার ধৈর্য্য নেই। এত দামী গাড়ীতে যারা চড়েন, তদের আয়ের উৎস কি, কেউ কি কখনো জানতে চেয়েছে? অভিজাত এলাকার ছেলেমেয়েদের চালচলন আর ব্যয় দেখে বোঝার উপায় নেই এরা বাংলাদেশী না আরবের কোন রাজপরিবারে ধনাঢ্য সন্তান। একটি বাচ্চা ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর জন্য কি পরিমান অর্থ ব্যয় করে কেই কি প্রশ্ন করেছে? অথচ এখনও গ্রামগঞ্জে ছেলেমেয়েরা খালী পায়ে ময়লা বস্ত্রে স্কুলে যায়, স্বপ্ন দেখে মানূষ হওয়ার। ঢাকা শহরের ধনীর অবাধ্য ছেলেমেয়েরা একবার বন্ধুকে নিয়ে বার্গার খেতে যে খরচ করে সেই পরিমান অর্থ পেলে গ্রামের ছেলেটির দুইমাসের খরচ মিটে যেত, কেউ কি ভেবেছে একবারও? একজন কেরানী অভিজাত এলাকায় অর্ধলক্ষ টাকা বাসাভাড়া দিয়ে বিলাসি জীবন কাটায়, দেখে প্রতিবেশী নীজের সন্তানকে উৎসাহিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কেরানী হওয়ার জন্য। কেউ ভাবেনা কি হয় সেখানে। সাংবাদিক ধনীদের তালিকায়, স্কুল মাষ্টার গাড়ীতে চড়ে, ওয়াজ করে হুজুর লক্ষ টাকা উপার্জন করে, বিদ্যুত বিভাগের মিটার রিডার ঢাকা শহরে ৮ টা বাড়ীর মালীক, দুদক কি করে? দোষ কেবল রিক্সাচালকের, রাস্তায় জ্যাম বাধায়। সৎ কর্মচারীকে দেখে উপহাস করে বলে ” লোকটা বেকুব “। ডাক্তারের নির্লজ্জ্য অর্থ পিপাসার কথা বলতে পারেনা কেউ, চিকিৎসাতো নিতেই হবে! হাসপাতলে না যাওয়ার জন্য প্রার্থনা করে দিবারাত্রি, একবার গেলেই এক বছরের উপার্জন শেষ না হয়! ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে পরিশোধের ভাবনায় হার্ট এট্যাক না করে বসে- কেউ জনেনা। এসব দেখেই পথের টোকাই স্বপ্ন দেখে চোরাগলির, শির্ষ সন্ত্রাসের তালিকায় নাম লিখিয়ে বনে যায় এলাকার সম্রাট, নির্বাচনে জয়ী হয়ে যায় এলাকার জনদরদি কমিশনার, কার দোষ? সমাজের সব ক্ষেত্রে এখন অনিয়মের নিয়ম বৈধতা পেয়েছে। যে যার মত অর্থবিত্ত্বের পাহাড় গড়ছে। কোনভাবে একবার বড়লোক হয়েগেলে কেউ আর পিছনের কথাটি মনেও রাখেনা। লেবাস বদল করে হয়ে যায় সুশিল। টেলিভিশনের টক শো তে গিয়ে জ্ঞান বিলায় জনগনের জন্য। অন্যায়, অপরাধ আর অসততার বিরুদ্ধে সৌম্য চেহারায় নিতীবাক্য বিলায় আমরা শুনে ধন্য হই। আমরা কত ভাগ্যবান, তাইনা?
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
১১ জুলাই ২০২০।