ডিবিএন ডেস্কঃ আজ ১লা ফেব্রুয়ারি। আর ফেব্রুয়ারি মানেই ভাষার মাস। বাঙ্গালী জাতি পুরো মাস জুড়ে ভালোবাসা জানাবে ভাষা শহীদদের প্রতি। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল আযাচিত প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনা ও প্রেরণার প্রথম প্রকাশ। আর সেই প্রেরণা নিয়ে বাঙালি এগিয়ে যায় জাতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনের দিকে, ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য। তাই শোকাবহ এ মাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গৌরব আর অহঙ্কারের অধ্যায়। কারণ, পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালি যারা ভাষার জন্য এ মাসে জীবন দিয়েছিল।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরা প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে।
ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
আর ভাষার জন্য বাংলার দামাল সন্তানদের আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে। এর মধ্যদিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এখন বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হয়।
এদিকে ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে নানা কর্মসূচি। তবে করোনা মহামারির কারনে এবারের অমর একুশের অনুষ্ঠানমালায় আনা হচ্ছে পরিবর্তন। একুশের মাসের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ মাস ব্যাপি বইমেলা এবার ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে না। দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। করোনা মহামারির বাস্তবতা বিবেচনা করে এবারও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।