তুলসী গাছের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। তুলসী অর্থ ‘যার তুলনা নেই’ এককথায় অতুলনীয়।
এর ইংরেজি নাম Holy Basil. তুলসী গাছকে ঔষধি গাছ বলা হয়, অনেকে এ গাছকে বৈদ্য গাছও বলে থাকে।
বাংলাদেশে যে চার প্রকার তুলসী গাছ দেখা যায় সেগুলি হলো: বাবুই তুলসী, রামতুলসী, কৃষ্ণ-তুলসী, ও শ্বেত তুলসী।
ঘরে একটি তুলসি গাছই পারে আপনাকে বাচাতে অনেক রোগবালাই থেকে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত। ব্রহ্মকৈবর্তপুরাণে তুলসীকে ‘সীতাস্বরূপা’, স্কন্দপুরাণে ‘লক্ষীস্বরূপা’, চর্কসংহিতায় ‘বিষ্ণুপ্রিয়া’, ঋকবেদে ‘কল্যাণী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আসলে ‘দ্য কুইন অব হার্বস’ নামে পরিচিত তুলসি গাছের গুণাগুণ লিখে শেষ করা সম্ভব নয়।
হাজারো গুণ সম্পন্ন এই গাছের ফুল, পাতা, কান্ড ও মূল আদিকাল থেকে আয়ুর্বেদ ও ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে তুলসি গাছের পাতা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, সেই সঙ্গে নানা ধরনের সংক্রমণ হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নানা রোগ এমনিতেই দুরে পালায়।
আসুন জেনে নিই এর ব্যবহারে এবং কিছু উপকারিতা –
তুলসী ঔষধি গাছ, সর্দিকাশি হলে আপনি চায়ের সাথে সিদ্ধ করে এটি পান করতে পারেন অথবা তুলসী রসের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে আপনার সর্দিকাশি সাতদিনের আগেই পালাবে।
তুলসী পাতায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে সেখানে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমায়।
শুধু তাই নয়, প্রতিদিন যদি মধু দিয়ে তৈরি চুলসি পাতার রস খাওয়া যায়, তাহলে কিডনির পাথর গলে তো যায়ই,
সেই সঙ্গে শরীর থেকে তা বেরিয়েও যায়।
প্রসঙ্গত, তুলসী পাতায় যে ডিটক্সিফাইং এজেন্ট রয়েছে তা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে দেয় না।
ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
শরীরে দাদ বা খুজলি হলে তুলসী রস আক্রান্ত স্থানে দিলে তা কিছুদিনেই সেরে যাবে।
তুলসী পাতার রসে মধু মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের পেট কামড়ানো, কাশি ও লিভার দোষে উপকার পাওয়া যায়।
তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মত করে খেলে দীঘদিন নীরোগ থাকা যায়। তুলসী চা হিসাবে এটি বেশ জনপ্রিয়।
রক্ত পরিশুদ্ধতায় প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২-৩ টি তুলসি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে রক্তে উপস্থিত
ক্ষতিকর উপাদান এবং টক্সিন শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরের ভিতর থেকে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুগারের সবথেকে বড় যম। আর এই উপাদানটি বিপুল পরিমাণে রয়েছে তুলসি পাতায় যা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মাথার যন্ত্রনা কমাতে একটা বড় পাত্রে জল নিয়ে তাতে কয়েকটা তুলসি পাতা ফেলে দিন।
তরপর সেই জলটা ফুটিয়ে নিন। এবার মাথা টাওয়ালে ঢেকে সেই জলের ভাব নিলে দেখবেন মাথা যন্ত্রণা কমে যাবে।
নিয়মিত তুলসী পাতার রস খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহের মাত্রা ঠিক রাখে।
লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে হলে তুলসী পাতার রস, ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম পানির মধ্যে মিশিয়ে পান করুন।
শীতকালে শিশুদের তুলসী পাতার রস খাওয়ালে কৃমি দূর হয় এবং মাংসপেশি ও হাড় থাকে শক্তিশালী।
ডায়রিয়া হলে ১০ থেকে ১২ টি তুলসীর পাতা পিষে রস খেয়ে ফেলুন, দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।
তুলসী পাতার রস ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তুলসী পাতা বেটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়।
এছাড়াও তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগালে ত্বকের যেকোনো সমস্যায় বেশ উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়া ত্বকের কোনো অংশ পুড়ে গেলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফুটিয়ে লাগালে জ্বালা কমবে এবং সেখানে কোনো দাগ থাকবে না।
সূত্র: গ্রীনিকালচার।